নেত্রকোনার আটপাড়ায় এক কিশোরীকে (১৫) ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে প্রতিবেশী এক বৃদ্ধের বিরুদ্ধে। একাধিকবার ধর্ষণের পর ওই কিশোরী বর্তমানে ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা।
মেয়েটির পরিবার ২৭ মে বৃহস্পতিবার সকালে অভিযুক্ত ওই ব্যক্তির কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি তা ধামাচাপা দিতে বিয়ের আশ্বাসসহ নগদ টাকা ও কিছু জায়গা লিখে দেওয়ার প্রস্তাব দেন। কিন্তু মেয়েটি এতে রাজি না হওয়ায় ওই ব্যক্তি বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান।
অভিযুক্ত ওই ব্যক্তি হলেন মো. ইউনুছ খান (৬০)। তিনি স্বরমুশিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা। পেশায় কৃষক। বিবাহিত ইউনুছের পরিবারে স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। পরিবারের সদস্যরা জেলা শহরে বসবাস করেন।
এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা, পুলিশ এবং ওই মেয়েটির এক স্বজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া ওই কিশোরীর বাড়িতে ফ্রিজ না থাকায় তারা প্রতিবেশী ইউনুছের ঘরের ফ্রিজে মাছ ও মাংস সংরক্ষণ করত। অধিকাংশ সময় মেয়েটিই ফ্রিজে মাছ-মাংস আনা-নেওয়া করত।
সেই সূত্রে ইউনুছ তাকে একদিন ঘরে একা পেয়ে জোর করে ধর্ষণ করেন। বিষয়টি কাউকে না জানাতে মেয়েটিকে ভয়ভীতি দেখানো হয়। এরপর বিভিন্ন ধরনের প্রলোভন ও বিষয়টি জানিয়ে দেওয়ার কথা বলে একাধিকবার ধর্ষণ করেন।
বর্তমানে মেয়েটি ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা। গত কয়েক দিন আগে মেয়েটির পরিবার তার শারীরিক পরিবর্তন লক্ষ্য করে। পরে জিজ্ঞাসা করলে সে বিষয়টি জানিয়ে দেয়। কিশোরীর পরিবারটি দরিদ্র হওয়ায় প্রভাবশালী ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রথমে ঘটনাটি প্রকাশ করতে সাহস পায়নি।
পরে ঘটনাটি এলাকায় জানাজানি হলে ইউনুছ খান মেয়েটির পরিবারকে হুমকি-ধমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে গর্ভজাত বাচ্চাটি নষ্ট করে দেওয়ার প্রস্তাব দেন। এতে মেয়েটি রাজি না হওয়ায় বৃহস্পতিবার সকালে ইউনুছ গ্রামের কয়েকজন মাতবর নিয়ে মেয়েটিকে বিয়ে করার প্রস্তাবসহ নগদ কিছু টাকা ও জমি লিখে দেওয়ার প্রস্তাব দেন। মেয়েটি ও তার পরিবার এতেও রাজি না হওয়ায় এবং এলাকায় জানাজানি হওয়ায় ইউনুছ বাড়ি থেকে সটকে পড়ে গা-ঢাকা দিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মেয়েটির এক স্বজন জানান, ইউনুছ ও তার লোকজন এ নিয়ে আমাদের বিভিন্নরকম ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। পুলিশকে না জানানো ও মামলা করতে নিষেধ করছেন। মেয়েটিকে বিয়ের প্রস্তাব, নগদ ছয় লাখ টাকা ও ৪০ শতক জমি লিখে দেবে বলছে। আমরা ভয়ে আছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত ইউনুছ খানের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তার এক স্বজন জানান, ইউনুছের বিরুদ্ধে যে অভিযোগটি উঠেছে তা সত্য নয়। তাকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে ফাঁসানো হচ্ছে। বিষয়টি পুলিশ সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করলে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে। আর ইউনুছ মেয়েটিকে বিয়ের প্রলোভন, নগদ টাকা ও জমি লিখে দেওয়ার বিষয়টি তার জানা নেই বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে আটপাড়া থানার ওসি জাফর ইকবাল বলেন, ঘটনাটি শুনে থানা থেকে একজন এসআইসহ কয়েকজন পুলিশ ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।