নড়াইলে লক্ষাধিক টাকায় ৫ম শ্রেণির ছাত্রী ধর্ষণ মামলার আপস-রফা করা হয়েছে। সদর উপজেলার মাইজপাড়া ইউনিয়নের বোড়ামারা গ্রামে স্থানীয় মাতবররা অতি উৎসাহী হয়ে দু’পক্ষকে বাধ্য করে এ সালিশ বৈঠক করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

২১ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার রাতে বোড়ামারা গ্রামের মান্নান শিকদারের বাড়িতে এ সালিশ বৈঠক হয়। মাইজপাড়া ইউনিয়ন অওয়ামী লীগের সভাপতি সলেমান মোল্যা সভাপতিত্বে সালিশে উপস্থিত ছিলেন বোড়ামারা গ্রামের মোনায়েম শেখ, আলি মিয়া, বক্কার মোল্যা, আজিজার মোল্যা, আবু তাহের মোল্যা, ধর্ষক ও ভিকটিমের পরিবারের লোকজনসহ আরো ২৫/৩০ জন। সরেজমিনের ২০ ডিসেম্বর বোড়ামারা গ্রামে গিয়ে এসব তথ্যের সত্যতা মিলেছে। ধর্ষণের শিকার শিশুটির পরিবার জানায় ইতিপূর্বে দু’বার সালিশ বৈঠক বসে। ১ম দফা ৭ ডিসেম্বর এবং ২য় দফা ১১ ডিসেম্বর সালিশে ১ লাখ টাকা দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। পরবর্তীতে গত বৃহস্পতিবার ৩য় দফা সালিশে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায় রফা হয়। এর মধ্যে ২০ হাজার টাকা গ্রাম্য সালিশকারীরা পাবে।

৭০ হাজার টাকা পাবে ভিকটিমের পরিবার। এ ছাড়া পুলিশের জন্য যা করা দরকার তা আসামি পক্ষ করবে, এই মর্মে শালিসে সিদ্ধান্ত হয়। ধর্ষণের শিকার শিশুটির বাবা (প্রতিবন্ধী) জানান, সালিশের সভাপতি সলেমান মোল্যার কাছ থেকে তারা ৭০ হাজার টাকা বুঝে পেয়েছেন। পুলিশের অংশ আসামিরা মেটাবে। মামলা প্রসঙ্গে ভিকটিমের বাবা বলেন, মেয়ের এতোবড় সর্বনাশ করায় মামলা করা হয়েছিল। আশা ছিল অপরাধির কঠিন শাস্তি হবে। কিন্তু গ্রামের লোকের চাপে বাধ্য হয়ে মীমাংসা করতে হয়েছে। বিশেষ করে প্রতিবেশী মোনায়েম শেখ খুব চাপাচাপি করছিল। তার আত্মীয় পুলিশ কর্মকর্তা বলে ভয়ভীতি দিয়ে সালিশে বসতে বাধ্য করেছে। আসামি পক্ষ হতে সে ব্যক্তিগতভাবে মোটা অংকের টাকা নিয়েছে। ধর্ষক আমজাদের বাড়িতে গিয়ে তাকে বাড়ি পাওয়া যায়নি। তিনি মামলার পরদিন থেকেই পলাতক রয়েছেন।
আমজাদের স্ত্রী পিয়ারী বেগম বলেন, গ্রাম্য মাতবরেরা ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা নিয়ে সালিশ মীমাংসা করেছে। মাতবররা বলেছেন, ভিকটিমকে দেয়া হবে ৭০ হাজার টাকা। মামলা নিস্পত্তি করতে পুলিশকে ৪০ হাজার টাকা দেয়া হবে। এদিকে সালিশ মীমাংসাকারী গ্রাম্য মাতবর মোনায়েম শেখ এসব ব্যাপারে কোথাও মুখ না খোলার জন্য মামলার বাদিকে নানা ভাবে চাপ দিচ্ছেন। এ ব্যাপারে সালিশদার মোনায়েম শেখ’র নিকট জানতে চাইলে তিনি উত্তেজিত হয়ে নিজেকে পুলিশ কর্মকর্তার শ্যালক পরিচয় দেন। ধর্ষণ মামলায় সালিশ বিচার প্রসঙ্গে মাইজপাড়া ইউনিয়ন অওয়ামী লীগের সভাপতি সলেমান মোল্যা ১৯শে ডিসেম্বর সালিশ করার কথা অস্বীকার করে বলেন, আগে দুদফা বসা হয়েছিলো কোন ফয়সালা হয়নি। অতঃপর গত বৃহস্পতিবার সকল মাতবররা আসেনি বলে সালিশ হয়নি। মাইজপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান বলেন, এ ধরনের সালিশের ঘটনা তিনি জানেন না। যদি এমন সালিশ কেউ করে থাকে তবে অবশ্যই অন্যায় হয়েছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নড়াইল সদর থানার উপ-পরিদর্শক মাসুদ রানা বলেন, এ ধরনের মামলা আপসযোগ্য নয়।
স্থানীয় মাতবরেররা পুুলিশের নাম ভাঙাতে পারে, তাতে পুলিশের কি করার আছে? যথানিয়মে মামলার চার্জ গঠন করা হবে। নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইলিয়াস হোসেন বলেন, ধর্ষণ মামলা হয়েছে। এটি যথাযথভাবে চলবে। মীমাংসার কোন খবর তিনি শোনেননি।

মানব জমিন

মন্তব্য করুন