আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীর। গত ১৬ অক্টোবর ইসলামি খেলাফত প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে শামিল হওয়ার ডাক দিয়ে আবারও অনলাইনে লাইভ সম্মেলন করেছে সংগঠনটি।

 

সম্মেলন সফল করার জন্য আগে থেকেই প্রকাশ্যে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পোস্টার লাগানোর পাশাপাশি বিভিন্ন মসজিদে প্রচারপত্রও বিলি করেছেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। চলতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসেই ঠিক একইভাবে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে সম্মেলন করেছিল সংগঠনটি।

ফেইসবুক ও ইউটিউবে অলওয়াকলিয়াহ ডট টিভি নামের সাইট ঘেঁটে দেখা গেছে, খিলাফত রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা কীভাবে সম্ভব ও এই রাষ্ট্রের নীতিগুলো কী হবে সে বিষয়ে আলোচনা করেছেন একাধিক বক্তা। ফেইসবুকে তাদের একাধিক ছবিও দেখা গেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের উপ-কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, হিযবুত তাহরীরের কর্মকাণ্ড নজরদারির মধ্যে রয়েছে। ইতিমধ্যে অনলাইন সম্মেলনের আয়োজনের দায়িত্বে থাকা এক গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে গ্রেপ্তার করে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। এখন তার কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে বাকি নেতাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

একাধিক পুলিশ কর্মকর্তার ভাষ্য, এই সংগঠনটির নেতাকর্মীরা এখনো কোনো ধরনের ভায়োলেন্সে জড়িয়ে পড়েননি। তাই তাদের বিষয়ে খানিকটা উদাসীন রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এই শিথিল মনোভাবের কারণেই এই সংগঠনটি সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী অবস্থানের দিকে এগুচ্ছে। ওই কর্মকর্তারা আরও জানান, প্রকৃতপক্ষে এই সংগঠনের সদস্য সংখা কতজন ও নেতৃত্বে কারা রয়েছেন সে বিষয়ে সঠিক তথ্য জানা নেই তাদের কাছে। এছাড়া এই সংগঠনের কর্মকাণ্ড অনলাইনের ডার্ক ও ডিপ ওয়েবে বেশি হয়ে থাকে। এ কারণে তাদের শনাক্ত করা যাচ্ছে না। এছাড়া আন্তর্জাতিক এই সংগঠনটির কর্মকান্ড বিশ্বের অনেক দেশেই বৈধ। সেই সুযোগে তারা নিষিদ্ধ দেশগুলোতে ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কর্মকান্ড পরিচালনা করে যাচ্ছেন। এতে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের শনাক্ত করতে পারছে না।

জঙ্গি কর্মকান্ড অনুসরণকারী পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, প্রায় ১০ বছর আগে বাংলাদেশে হিযবুত তাহরীরের কর্মকান্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। তারপরও মাঝে-মধ্যেই ঘোষণা দিয়ে সংগঠনটির নেতাকর্মীদের সাংগঠনিক কর্মকান্ড পালন করতে দেখা গেছে। গত মার্চ মাসেও সংগঠনটি অনলাইনে সম্মেলন করেছে। ওই সম্মেলনে বক্তা হিসেবে যারা ছিলেন গত ১৬ অক্টোবরের সম্মেলনেও তাদের একজনকে দেখা গেছে। কর্মকর্তারা জানান, নিষিদ্ধ হিযবুত তাহরীরের প্রচারণা অনলাইনেই বেশি। বিশ্বের অনেক দেশেই তারা এখনো সক্রিয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কর্র্তৃপক্ষের অসহযোগিতার কারণে এই সংগঠনের হালনাগাদ তথ্য তাদের কাছে নেই। তাদের দ্বারা হামলার শঙ্কা নেই মনে করে তাদের প্রতি তুলনামূলক কম নজর রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর।

সিটিটিসির সহকারী কমিশনার (এসি) অহিদুজ্জামান নূর বলেন, ভিপিএন-এর মতো কিছু অ্যাপস রয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে জঙ্গি সংগঠনগুলো তাদের কর্মকান্ড পরিচালনা করে থাকে। অনেক সময় এসব অ্যাপস কর্র্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ না করায় জঙ্গিদের অবস্থান শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে যারা সক্রিয় রয়েছেন তারা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উচ্চশিক্ষিত তরুণ। এদের সবাই উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান। বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থী। অনলাইনে বিভিন্ন প্রোটেক্টেড অ্যাপসের মাধ্যমে নির্দেশনা পেয়ে সেই অনুযায়ী তাদের কর্মকান্ড পরিচালনা করে যাচ্ছেন।

হিযবুত তাহরীর বাংলাদেশে ২০০১ সাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। যদিও ১৯৫৪ সাল থেকেই এর কার্যক্রম শুরু হয় বিভিন্ন দেশে। বিশ্বের অনেক দেশেই এখনো এদের প্রকাশ্য কার্যক্রম রয়েছে। বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করা হয়েছে ২০০৯ সালে। এরপরই তাদের অধিকাংশ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সর্বশেষ ২০১৯ সালে প্রায় ৩৫০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়। যাদের অধিকাংশই জামিনে বেরিয়ে নতুন করে সাংগঠনিক কাজে জড়িয়ে পড়েছেন।

দেশ রূপান্তর

মন্তব্য করুন