বগুড়ার শিবগঞ্জে ধর্ষণ চেষ্টার মামলা না নিয়ে এক গৃহবধূকে খারাপ চরিত্রের নারী হিসেবে চালান ও তাকে থানায় দুই দফা শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে শিবগঞ্জ থানার ওসি এসএম বদিউজ্জামান ও এসআই রতন কুমার রায়ের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
গৃহবধূর মা ১৩ ডিসেম্বর রোববার বিকালে বগুড়ার দায়রা জজ আদালতে ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা মামলা করেছেন। জজ নরেশ চন্দ্র সরকার এ ব্যাপারে একজন প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে তদন্ত করতে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশ দিয়েছেন।
এ ঘটনায় পত্রিকায় রিপোর্ট ও ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হলেও ওসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বরং তাকে বিশেষ সম্মাননা ক্রেস্ট দেয়া হয়েছে। এতে সাধারণ মানুষের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
বাদী এজাহারে উল্লেখ করেছেন, তার মেয়েকে শিবগঞ্জ উপজেলার সিহালী ফকিরপাড়া গ্রামে বিয়ে দেন। সংসার করাকালে উপজেলার জানগ্রামের আবদুর রশিদের ছেলে কলেজছাত্র রামিম হাসান রিমন (১৯) উত্ত্যক্ত ও কুপ্রস্তাব দিলে মেয়ে তা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে। গত ২৪ নভেম্বর বেলা দেড়টার দিকে রিমন বাড়িতে ঢুকে তার মেয়েকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। তার চিৎকারে প্রতিবেশীরা এসে মেয়েকে উদ্ধার ও রিমনকে আটক করেন।
এদিকে আত্মীয়-স্বজন রিমনকে বাঁচাতে শিবগঞ্জ থানা পুলিশের সঙ্গে যোগসাজশ করে। ওই দিন বেলা আড়াইটার দিকে এসআই রতন কুমার রায়কে বাড়িতে ডেকে আনে। তখন মেয়ে পুলিশের কাছে তাকে ধর্ষণ চেষ্টার কথা বলে। পুলিশ কর্মকর্তা অভিযোগ নেয়ার আশ্বাস দিয়ে মেয়ে ও রিমনকে শিবগঞ্জ থানায় নিয়ে যান।
বিকাল ৪টার দিকে থানার ওসি বাদীর সামনে তার মেয়েকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন। গালিগালাজ না করতে অনুরোধ করলে এসআই রতন কুমার রায় বাদীর মেয়ের (ভিকটিম) গালে চড়-থাপ্পর দিয়ে থানা হাজতে রেখে শারীরিক ও মানসিক কষ্ট দেন।
বাদী অভিযুক্ত রিমনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ চেষ্টার মামলা নিতে বললে ওসি ও এসআই তার মেয়েকে খারাপ চরিত্রের নারী আখ্যায়িত করেন। এরপর জনবিরক্তিকর অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িত মর্মে হাজতে আটক রাখেন। এছাড়া রাতে এসআই রতন তার মেয়েকে চড়-থাপ্পড় দেন এবং অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন। পরদিন মেয়েকে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৫১ ধারায় জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চালান দেয়া হয়।
বাদী আরও অভিযোগ করেন, তিনি আদালতে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন- এমন কথা জানার পর শিবগঞ্জ থানার ওসি এসএম বদিউজ্জামান ও এসআই রতন কুমার রায় স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে তাদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আসছেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবদুল বাছেদ ও মোস্তফা কামাল পরাগ জানান, শুনানি শেষে আদালত এ ব্যাপারে জুডিশিয়াল তদন্তের নির্দেশ দেন। আদালত একজন প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটর মাধ্যমে ঘটনাটি তদন্ত করে আগামী বছরের ৭ জানুয়ারি রিপোর্ট দিতে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশ দেন।
অ্যাডভোকেট আবদুল বাছেদ বলেন, শিবগঞ্জ থানার ওসি ও এসআই তার বাদীর মেয়ের সঙ্গে চরম অন্যায় করেছেন। ওই মেয়ে অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িত থাকলে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন ব্যভিচারের মামলা করতে পারতেন। কিন্তু পুলিশ কর্মকর্তা আইনের রক্ষক হয়েও ধর্ষণ চেষ্টার মামলা না নিয়ে ভিকটিমকে লাঞ্ছিত ও খারাপ মেয়ে হিসেবে আদালতে চালান দিয়েছেন। এতে ওই মেয়ের ঘর-সংসার নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে শিবগঞ্জ থানার ওসি এসএম বদিউজ্জামান এর আগে বলেছেন, জনগণ অসামাজিক কার্যকলাপের সময় ওই মেয়ে ও রিমনকে ধরে পুলিশে দেয়। তাই তাদের জনবিরক্তিকর অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িত মর্মে আদালতে চালান দেয়া হয়।
পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভুঞা বলেন, গৃহবধূর অভিযোগ পেয়েছি। তবে ওই গৃহবধূ ও তার মায়ের অভিযোগ সত্য নয়। জনগণ তাদের হাতেনাতে ধরে পুলিশে দিয়েছেন।