বাংলাদেশ একটি সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন, শিক্ষাহীন মুসলিম রাষ্ট্র। যথার্থ মানবিক শিক্ষার অভাবে এদেশের মানুষ অন্য জাতিস্বত্তাকে ঘৃণা করেই বেড়ে ওঠে। সংখ্যালঘু নির্যাতন সেই ঘৃণার একটি প্রকাশ মাত্র। সংখ্যালঘু নির্যাতনের মূল কারণ অশিক্ষা, ধর্মান্ধতা, রাজনৈতিক সুবিধা, সংখ্যাললঘু সম্পত্তি দখলের লোভ ইত্যাদি। অশিক্ষা বাদ দিলে বলা যায় ধর্মান্ধতা, সংখ্যালঘু সম্পত্তি জবরদখল আর রাজনৈতিক কারনেই সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন বেশি হয়। এ পর্যন্ত যত নির্মম নির্যাতন, খুন, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে তার সিংহভাগ ক্ষেত্রেই উপর উল্লেখিত কারণগুলো জড়িত।

পঁচাত্তরের পর স্বাধীনতাবিরোধীদের আত্মপ্রকাশ ও তাদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় মাদ্রাসাভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। এ শিক্ষা ব্যবস্থায় শৈশবকাল থেকেই একজন শিক্ষার্থীর মনে অন্য সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ ঢুকিয়ে দেয়া হয়। পরবর্তী সমগ্রজীবনে এই বিদ্বেষমূলক মনোভাব কাটিয়ে উঠা তাদের জন্য কষ্টকর হয়ে উঠে। যার ফলশ্রুতিতে মূর্তি ভাঙা, সংখ্যালঘুদের উপাসনালয়ে হামলা করা ইত্যাদি ঘটনা ঘটে। সংখ্যালঘুরা বাংলাদেশের রাজনীতির একটি অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে ৯০ দশকের পর থেকে। যেকোন নির্বাচনের পরেই সংখ্যালঘু নির্যাতনের খবর পাওয়া যায়। ধর্মাশ্রয়ী দলগুলির পাশাপাশি দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলও এই সহিংসতা ঘটাচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলির প্রত্যক্ষ মদদে এরকম হামলা সংঘটিত হওয়ার সময় আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করে না।

বিভিন্ন পত্রিকা ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় সংখ্যালঘু নির্যাতনের খবর তেমনভাবে প্রকাশ করে না উপরন্তু কতিপয় উগ্র মুসলিম সাম্প্রদায়িক পত্রিকা সংখালঘু নির্যাতনের মদদ দেয়, এমন খবর প্রকাশ করে। এভাবে ক্রমাগত নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পরিমাণ ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। এররকম চলতে থাকলে একসময় বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু বলে কোন কিছু থাকবে না।

এই ভূখন্ডের মালিক শুধু বাঙ্গালি মুসলিম জাতি নয়, সকলেরই আছে এখানে বসবাসের অধিকার। সেই অধিকার সুনিশ্চিত করতে হলে প্রথমেই জনগনের মধ্যে ব্যাপক শিক্ষাকার্যক্রম চালাতে হবে। উগ্র ধর্মীয় ও জাতীয়তাবাদী চিন্তাচেতনা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। সংখ্যালঘু নির্যাতনরোধে সরকারের বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে হবে।

সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম অপসারণ করে ধর্মনিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে তৎপর হতে হবে। অপরাধীকে চিহ্নিত করে তাকে বিচারের আওতাভুক্ত করতে হবে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। মিডিয়াগুলির পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ পরিহার করতে হবে। সর্বোপরি মানুষের মধ্য মানবিক বোধ জাগিয়ে তুলতে হবে।

সকল ধর্ম, বর্ণ, জাতিগোষ্ঠীর মানুষেরা এই বাংলাদেশে শান্তিতে বসবাস করবে এই কামনা করি।

মন্তব্য করুন