বাগেরহাটের শরণখোলায় পঞ্চম শ্রেণির এক মাদ্রাসাছাত্রীকে (১১) ধর্ষণ মামলায় আসামি মাদ্রাসা সুপার ইলিয়াছ জোমাদ্দারকে (৪৮) যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।

 

 

বৃহস্পতিবার (৫ নভেম্বর) দুপুর ১২টায় এই রায় ঘোষণা করেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালত-২ এর বিচারক মো. নূরে আলম।

রায়ে তিনি আসামিকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও একবছরের কারাদণ্ড ঘোষণা করেন। এরআগে ২৯ অক্টোবর ও ১ নভেম্বর বাগেরহাট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ আদালতের বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মো. নূরে আলম এই চাঞ্চল্যকর মামলার বাদী-বিবাদী পক্ষের যুক্তি-তর্ক শোনেন। দণ্ডপ্রাপ্ত ইলিয়াছ জোমাদ্দার (৪৮) মোরেলগঞ্জ উপজেলার পূর্ব রাজাপুর গ্রামের বাসিন্দা।

আলোচিত এই মামলার বরাত দিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বাগেরহাট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ সহকারী কৌঁসুলি (এপিপি) রনজিৎ কুমার মন্ডল বলেন, ২০১৯ সালের ৮ আগস্ট সকাল সাতটায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে প্রতিদিনের মত পঞ্চমশ্রেণির ৪ ছাত্রী মাদ্রাসায় মাদ্রাসা সুপারের কাছে আরবি পড়তে যায়। পৌনে আটটার দিকে মাদ্রাসার সুপার ইলিয়াছ জোমাদ্দার এক ছাত্রীকে রেখে অন্য তিনজনকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। পরে তিনি ওই ছাত্রীকে মাদ্রাসার লাইব্রেরিতে নিয়ে ধর্ষণ করে। এই ঘটনা কাউকে না জানাতে হুমকি দিয়ে মেয়েটিকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন মাদ্রাসা সুপার ইলিয়াছ।

অসুস্থ অবস্থায় মেয়েটি মাদ্রাসা থেকে বেরিয়ে বাড়িতে যেয়ে তার মাকে ঘটনা খুলে বলে। অসুস্থ হয়ে পড়া মেয়েটিকে স্থানীয় গ্রাম্য চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা দেয়া হয়। এই ঘটনার এগারো দিন পর ১৯ আগষ্ট মেয়েটির বাবা বাদী হয়ে শরণখোলা থানায় মাদ্রাসা সুপার ইলিয়াস জোমাদ্দারের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন। এই মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) তদন্তভার দেয়া হলে পিবিআই এর উপ পরিদর্শক (এসআই) আবু সাইয়েদ তদন্তে নামেন। তিনি তদন্তে নেমে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়ানো মাদ্রাসা সুপার ইলিয়াছ জোমাদ্দারকে ঘটনার প্রায় দুই মাস পরে ওই বছরের ১৮ অক্টোবর জেলার ফকিরহাট উপজেলার কাটাখালি এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। গ্রেপ্তারের পর মাদ্রাসা সুপার ইলিয়াছ ধর্ষণের কথা স্বীকার করে তিনদিন পর আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাইয়েদ তদন্ত শেষে ধর্ষণের সত্যতা পেয়ে ১৩ নভেম্বর মাদ্রাসা সুপার ইলিয়াছের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেন। এরপর আদালতের বিচারক মামলাটিকে আমলে নিয়ে ২০২০ সালের ৯ মার্চ চার্জ গঠন করে। মার্চে দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে আদালতের কার্যক্রম সীমিত হয়ে পড়ে।

তিনি বলেন, এই রায়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হয়েছে।

রায়ের পর ওই ছাত্রীর পিতা ও মামলার বাদী জানান, রায়ে তিনি খুশি হয়েছেন। আর কোন পিতার যেন এমন ঘটনা শুনতে না হয়।

এরআগে গত ১৯ অক্টোবর এই আদালত মাত্র সাত কর্মদিবসে জেলার মোংলা উপজেলার মাকড়ডোন এলাকার ৭ বছরের একটি শিশুকে ধর্ষণের দায়ে আব্দুল মান্নান সরদার নামে একজনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়।

ঢাকা ট্রিবিউন

 

মন্তব্য করুন