প্রিমিয়ার গ্রুপ অব কোম্পানিজের চেয়ারম্যান সাবেক এমপি ডা. এইচ বি এম ইকবালের বিরুদ্ধে নানা সময়ে মামলা হয়৷ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর থেকে প্রকাশিত সেসব মামলার কার্যক্রম মুছে না ফেলায় চাপের পর সম্পাদকদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে৷

 

ডা. এইচ বি এম ইকবাল এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধে মামলা নিয়ে পুরনো প্রতিবেদন মুছে ফেলার জন্য কয়েক ডজন উকিল নোটিস পাঠিয়ে ‘অযৌক্তিক’ চাপ দেওয়ার ধারাবাহিকতায় এবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জ্যেষ্ঠ চার সম্পাদকের বিরুদ্ধে ‘মানহানির’ অভিযোগ করা হয়েছে বরিশালের আদালতে৷ বরিশালের মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে বুধবার মামলার আবেদন করেছেন ডা. ইকবালের ‘বন্ধু’ হিসাবে পরিচয় দিয়ে কাজী নাসির উদ্দিন বাবুল নামের এক ব্যক্তি৷

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী, হেড অব ইংলিশ নিউজ অরুণ দেবনাথ, বার্তা সম্পাদক জাহিদুল কবির এবং বার্তা সম্পাদক মুনীরুল ইসলামকে ওই আর্জিতে বিবাদী করা হয়েছে৷

গত দেড় দশকে বিভিন্ন সময়ে ডা. এইচ বি এম ইকবাল এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধে যেসব মামলা হয়েছে, তার কার্যক্রম আর আদালতের আদেশ নিয়ে অন্য সব সংবাদমাধ্যমের মতো বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমেও প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে৷ আর্জিতে কাজী নাসির উদ্দিন বাবুলের দাবি, ডা. ইকবাল ও তার পরিবারের সদস্যরা ওইসব মামলায় খালাস পেয়েও মামলার কার্যক্রম নিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পুরনো প্রতিবেদনগুলো এখনও অনলাইনে রয়ে গেছে৷ তাদের মতে যেগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা, কাল্পনিক ও বানোয়াট৷ তাতে দেশ-বিদেশে ডা. ইকবাল ও তার পরিবারের ‘সম্মানহানি হচ্ছে’৷ এই প্রেক্ষিতে নাসির উদ্দিন বাবুল ২০০ কোটি টাকার মানহানি মামলার আবেদন করেন৷ নোটিসে ডা. ইকবালের দুই ছেলে মঈন ইকবাল ও ইমরান ইকবাল এবং মেয়ে নওরীন ইকবাল ও স্ত্রী মমতাজ বেগমের বিরুদ্ধে দুদকের মামলার বিচারিক কার্যক্রমের ভিত্তিতে বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনও ‘মিথ্যা’ বলে দাবি করা হয়েছে৷

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে সাবেক সাংসদ ইকবাল বলেছিলেন, ‘‘আমাদের ওয়ান-ইলেভেনের কেইস আজকে ১২ বছর হয়ে গেছে৷ এগুলো হাই কোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট থেকে কোয়াশ-আউট করে দিছে৷’’ এবারের নোটিসে বলা হয়েছে, ‘‘আগামী তিন কার্যদিবসের দিনের মধ্যে নিউজ পোর্টাল থেকে প্রত্যাহার পূর্বক ডা. এইচ বি এম ইকবাল ও তাহার পরিবারের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা না করিলে আপনাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হইবে৷’’ অন্যথায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং ‘সম্মান নষ্ট করার জন্য’ ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয় নোটিসে৷

 

পেশাগত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের চাপের বিষয়গুলো জানাতে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে আসেন প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী৷ তিনি বলেন, ‘‘বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের নিজস্ব কোনো অনুসন্ধান এসব প্রতিবেদনে নেই; সম্পূর্ণভাবে মামলার কার্যক্রম ও আদালতের আদেশই সেখানে বস্তুনিষ্ঠভাবে প্রতিফলিত হয়েছে৷ তাহলে কোন যুক্তিতে একটি সংবাদমাধ্যম এসব প্রতিবেদন সরিয়ে ফেলবে? দীর্ঘদিন নানাভাবে চেষ্টার পরও প্রতিবেদন সরাতে রাজি করাতে না পেরে এখন তারা চাপ দেওয়ার অদ্ভুত এক কৌশল নিয়েছেন৷’’ এ ধরনের চাপের কাছে নতি স্বীকার না করার প্রত্যয় জানিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক বলেন, ‘‘আর্কাইভে এই সব তথ্য থাকবে৷ তরুণ সহকর্মীদের জন্য থাকবে, ভবিষ্যতে গবেষণার জন্য থাকবে৷” বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম আইনি পথেই লড়বে জানিয়ে প্রধান সম্পাদক বলেন, ‘‘বিচারকতো অন্ধ নন৷’’

পুরনো প্রতিবেদন মুছে ফেলার জন্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এভাবে চাপ দেওয়ার বিষয়টিকে ‘অনৈতিক’ হিসেবে বর্ণনা করে ইতোমধ্যে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে সারা দেশের সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন৷

ডিডব্লিউ বাংলা

মন্তব্য করুন