ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় একটি মহিলা মাদ্রাসার শিক্ষকের কাছে একাধিক শিক্ষার্থী যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ১৬ সেপ্টেম্বর সোমবার বিকালে পুলিশ ওই মাদ্রাসা থেকে নির্যাতনের শিকার এক শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করেছে।

আখাউড়া পৌর এলাকার দুর্গাপুর গ্রামের আন নূর ইসলামিয়া মহিলা মাদ্রাসা ও এতিমখানায় এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্ত মাদ্রাসা শিক্ষক শওকত হোসেন রিপন ও পরিচালক আসমা বেগমসহ পরিচালনা কমিটির সদস্যরা পলাতক রয়েছে।

আখাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রসুল আহমেদ নিজামী এ কথা জানান। ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী মাদ্রাসাটিতে তালা দিয়েছেন।
১৬ সেপ্টেম্বর সোমবার বিকেলে এক শিক্ষার্থীর মা বাদী হয়ে আখাউড়া থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
পুলিশ জানায়, পৌর শহরের দুর্গাপুর গ্রামের প্রবাসী আবুল হোসাইন সম্রাট প্রায় ৫ বছর আগে আন নূর ইসলামিয়া মহিলা মাদ্রাসা ও এতিমখানা চালু করেন। তার স্ত্রী আসমা আক্তার ওই মাদ্রাসাটি পরিচালনা করেন। মাদ্রাসার ১১ জন শিক্ষকের মধ্যে ১০ জনই নারী। শুধু শওকত হোসেন রিপন নামে একজন পুরুষ শিক্ষক রয়েছেন। মাদ্রাসায় শিশুশ্রেণি থেকে ৭ম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান চলে। আবাসিক ও অনাবাসিক নিয়ে মাদ্রাসায় শতাধিক ছাত্রী রয়েছে। তাদের মধ্যে প্রায় ৬০ জন ছাত্রী আবাসিক।
সোমবার সকালে হঠাৎ করে ১৪ বছরের এক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়লে সবাই ওই শিক্ষকের অপকর্মের কথা জানতে পারে। পরে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে। পরে তাকে আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।
একাধিক ব্যক্তি জানান, কয়েক মাস ধরে হুজুরের এসব অপকর্মের কথা এলাকায় শোনা গেলেও মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটি কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।

এক অভিভাবক জানান, তার ভাইয়ের মেয়ে ওই মাদ্রাসায় পড়ে। হুজুর প্রায়ই ছাত্রীদের বিরক্ত করতো বলে সে তাকে জানিয়েছে।

অপর অভিভাবক গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘আমার মেয়ে এই মাদ্রাসায় পড়ে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ছাত্রী জানায়, শওকত হোসেন রিপন ছাত্রীদের বিভিন্ন অজুহাতে মাদ্রাসার বাইরে নিয়ে স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিতেন। এছাড়া অফিসে ডেকে নিয়ে শিক্ষার্থীদের যৌন নিপীড়ন করতেন। বিষয়টি বড় ম্যাডামকে (আসমা বেগম) জানানো হলে তিনি শরম শরম বলে শিক্ষার্থীদের চুপ করে থাকতে বলতেন। তারা জানায়, মাদ্রাসার কমপক্ষে ১০ ছাত্রী হুজুরের কাছে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে।
এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট এলাকার পৌর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘ রিপন একাধিক ছাত্রীকে যৌন হয়রানি করেছে বলে তিনি অভিযোগ পেয়েছেন। বিষয়টি মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সদস্যদের জানানো হয়েছে।’
এ ব্যাপারে আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল অফিসার ডা. সানজিদা আক্তার বলেন, ‘ওই শিক্ষার্থীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।’
আখাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) মো. আরিফুল আমিন বলেন, ‘মাদ্রাসায় যাওয়ার পর কয়েকজন ছাত্রী আমার কাছে হুজুরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে। অসুস্থ শিক্ষার্থীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় ছাত্রীর মা বাদী হয়ে শওকত হোসেন রিপন ও মাদ্রাসার পরিচালক আসমা বেগমকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেছেন।’
আখাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রসুল আহমেদ নিজামী জানান, আমরা আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান পরিচালনা করছি।

বাংলা ট্রিবিউন

মন্তব্য করুন