মাদারীপুরের শিবচরে ১৪ বছর বয়সী এক কিশোরীকে ফুসলিয়ে তুলে নিয়ে রাতভর ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে জাকির হাওলাদার (২৫) নামের এক দোকান কর্মচারীর বিরুদ্ধে। ধর্ষণ শেষে ওই কিশোরীকে রাস্তায় ফেলে পালিয়ে যায় জাকির।

 

পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় ওই কিশোরী বাড়ি ফিরে আসলে তার পরিবার থানায় মামলা দায়েরের পর পুলিশ ধর্ষক জাকিরের সহযোগী ওই কিশোরীর পার্শ্ববর্তী ভাড়াটিয়া দম্পতিকে গ্রেফতার করেছে।

মামলার নথি ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বন্দরখোলা ইউনিয়নের বাসিন্দা দরিদ্র দিনমজুর নিজের ঘরবাড়ি না থাকায় স্ত্রী ও এক মেয়েসহ প্রায় ১০ বছর আগে একই উপজেলার পাঁচ্চর ইউনিয়নের এক পরিবারে আশ্রয় নেয়। পরিবারটি তাদের অসহায়ত্ব দেখে নিজেদের একটি ঘরে ভাড়া ছাড়াই বসবাস করতে দেয়।

ওই দরিদ্র দিনমজুর মাছবাজারে কাজ করে জন্মগত বধির স্ত্রী ও একমাত্র মেয়েকে নিয়ে কোনোমতে সংসার পরিচালনা করছিলেন। দরিদ্রতার কারণে মেয়েটিকে প্রাইমারি পাশের পর আর লেখাপড়া করাতে পারেনি তারা।

১৪ বছর বয়সী কিশোরী অন্যের দেওয়া একটি সেলাইমেশিনে সেলাইয়ের কাজ শিখছিল। কয়েক বছর আগে দেলোয়ার বেপারি (৩৫) ও তার স্ত্রী জান্নাত (২৭) ওই কিশোরীদের পাশের ঘর ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করে। দেলোয়ার বাসায় নিমকি, মুড়লিসহ তেলের ভাজা খাবার তৈরি করে এলাকার বিভিন্ন হাটে বিক্রি করত। তার এ কাজে সহযোগিতার জন্য ৩-৪ জন কর্মচারী ছিল।

প্রায় এক বছর যাবত একই উপজেলার মাদবরচর ইউনিয়নের সাড়ে এগারোরশি লপ্তিকান্দি গ্রামের মৃত আনোয়ার হাওলাদারের ছেলে জাকির হাওলাদার দেলোয়ার বেপারির ব্যবসায়িক কাজে কর্মচারী হিসেবে নিযুক্ত হয়। জাকির এখানে কাজ করার পর থেকেই তার লোলুপ দৃষ্টি পড়ে ওই কিশোরীর ওপর। জাকির প্রায়ই ওই কিশোরীকে কুপ্রস্তাব দিত।

এ ব্যাপারে জাকিরকে দেলোয়ার ও তার স্ত্রী জান্নাত সহযোগিতা করতো। গত ২ মার্চ দুপুরে দেলোয়ার ও তার স্ত্রী জান্নাত প্রাণে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে ওই কিশোরীকে বাসা থেকে বের করে বাহাদুরপুর বাজার সংলগ্ন রাস্তায় নিয়ে যায়। সেখানে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিয়ে জাকির অপেক্ষা করছিল। দেলোয়ার ও জান্নাতের সহযোগিতায় জাকির জোরপূর্বক কিশোরীর মুখ ও হাত বেঁধে অটোরিকশায় করে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার মালিগ্রাম এলাকায় একটি বাড়িতে নিয়ে যায়।

ওই বাসায় আটকে রেখে প্রাণে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে কিশোরীকে জাকির রাতভর ধর্ষণ করে। পরদিন ৩ মার্চ দুপুরে কিশোরীকে অসুস্থ অবস্থায় জাকির অটোরিকশায় করে শিবচরের পাঁচ্চর এলাকায় রাস্তার পাশে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা মেয়েটিকে উদ্ধার করে এক বাসায় রাখে। ৪ মার্চ স্থানীয়রা মেয়েটিকে বাহাদুরপুরের বাসায় পৌঁছে দেয়।

এদিকে মেয়ে নিখোঁজ হওয়ায় দরিদ্র বাবা বিভিন্ন স্থানে মেয়েকে পাগলের মতো খুঁজে বেড়াচ্ছিলেন। মেয়ে বাসায় আসলে তার কাছে ধর্ষণের ঘটনা শুনে ৪ মার্চ মেয়েটির বাবা বাদী হয়ে জাকির, দেলোয়ার ও জান্নাতকে আসামি করে ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। ওই রাতেই বাসা থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ অভিযান চালিয়ে দেলোয়ার ও তার স্ত্রী জান্নাতকে গ্রেফতার করে।

শিবচর থানার ওসি মো. মিরাজ হোসেন বলেন, ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অভিযান চালিয়ে ধর্ষণকারীর সহযোগী দেলোয়ার ও তার স্ত্রী জান্নাতকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মূলহোতা জাকিরকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে।

যুগান্তর

মন্তব্য করুন