মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে পঞ্চম শ্রেণীর এক স্কুলছাত্রী (১৩) ধর্ষিত হওয়ার ঘটনায় তাকে স্কুল থেকে বের করে দিয়েছেন প্রধান শিক্ষিকা। এতে ওই ছাত্রীর পড়ালেখা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এ নিয়ে ওই ছাত্রী, তার অভিভাবক ও এলাকাবাসীর মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। ধর্ষণের অভিযোগে পুলিশ উত্তর যশলদিয়া (শিমুলতলা) গ্রামের মৃত রজমান হাওলাদারের ছেলে আলাউদ্দিন হাওলাদার আলামন (৫৫) নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে। এদিকে এ ঘটনায় একই গ্রামের মৃত ওয়াহেদ আলী শেখের ছেলে খলিলুর রহমান শেখ (৫৪) নামে এক সালিশদারকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সে ওই মামলার ২ নং আসামি। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার মেয়েটির মা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে লৌহজং থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। সেখানে তার মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে মামলার অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন। তিনি আরও জানান, গত মাসের ২৪ তারিখে সকাল সাড়ে ১০টার সময় নিজ বাসা থেকে প্রতিবেশীর বাড়িতে ধঞ্চে খেতের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল তার মেয়ে। এ সময় আলাউদ্দিন হাওলাদার মেয়েটির মুখ চেপে তাকে ধর্ষণ করে। ধর্ষণ শেষে এ বিষয়ে কারও কাছে জানাতে নিষেধ করে এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে ছেড়ে দেয়। পরে মেয়েটি বাসায় এসে আমাকে এবং ওর বাবাকে বিষয়টি খুলে বলে। আমরা স্থানীয় মাদবর সালিশকারী খলিলুর রহমান শেখ ও করিম ছৈয়ালের কাছে বিষয়টি জানাই। তারা আপোস রফায় কথা বলেন। আমাদের কাছ থেকে সময় নিয়ে মামলার আলামত নষ্টসহ সাক্ষ্য প্রমাণ নষ্ট করে এরা দুজন। এবং তাদের বিষয়টি থানা পুলিশ বা অন্য কাউকে জানাতেও নিষেধ করে। তারা ধর্ষক আলাউদ্দিনকে বাঁচানোর চেষ্টা করে। আমরা সঠিক বিচার না পেয়ে শুক্রবার দুপুরে লৌহজং থানায় এসে মামলা করি। পরে থানা অভিযান চালিয়ে ধর্ষককে গ্রেফতার করেছে। এ সময় ধর্ষককে ছাড়িয়ে নেয়ার জন্য সালিশকারী তদবির করতে থানায় আসলে পুলিশ তাকেও শুক্রবার রাত ৯টার সময় গ্রেফতার করে।

অন্যদিকে এ ধর্ষণের ঘটনা জানাজানি হওয়ায় উত্তর যশলদিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শামিমা আক্তার গত ৮ জুলাই নির্যাতিত শিশুটিকে ক্লাসরুম থেকে বের করে দেন এবং বিদ্যালয়ে আর যেতে মানা করেন। পরে ভুক্তভোগীর মাকে ডেকে নিয়ে তার মেয়েকে ওই বিদ্যালয়ে পড়ানো সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেন। তবে মেয়েটি মাদ্রাসায় পড়লে টিসি দেবেন বলে আশ^াস দেয়া হয়। এতে ধর্ষিতা ওই মেয়েটির লেখাপড়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। মেয়েটির মনোবল ভেঙ্গে গেছে বলে জানিয়েছেন তার মা। তাছাড়া এ নিয়ে এখন স্থানীয়দের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। মেয়েটির মা জানিয়েছেন, আমার মেয়ের কি দোষ। একদিকে সে ধর্ষণের শিকার হলো, তার বিচার পাওয়ার পূর্বেই আমার মেয়েকে স্কুল থেকে বের করে দেয়া হলো। এটা কোন ধরনের বিচার? সমাজে মানসম্মান হারালাম। আবার মেয়েটি পড়ালেখার সুযোগও হারালো।

 

লৌহজং থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ আলমগীর হোসাইন জানান, মামলা হওয়ার পরে শুক্রবার পৃথক পৃথকভাবে ধর্ষক ও সালিশকারীকে গ্রেফতার করেছি। শনিবার বেলা ১১টায় তাদের মুন্সীগঞ্জ কোর্টে পাঠানো হয়েছে। আর নির্যাতিত শিশুটিকে প্রধান শিক্ষিকার স্কুল থেকে বের করে দিয়েছে এই বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে জানিয়েছি।

এ বিষয়ে লৌহজং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কাবিরুল ইসলাম খান জানান, আমরা অভিযোগ পেয়েছি। শিশুটির সঙ্গে যে নির্যাতন হয়েছে সে বিষয়টি উত্তর যশলদিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা জানা সত্ত্বেও তিনি আমাদের জানাননি। বরং না জানিয়ে অসহায় মেয়েটিকে স্কুল থেকে বের করে দিয়েছেন। তার উচিত ছিল শিশুটির পাশে দাঁড়িয়ে বাদী হয়ে মামলা করার কিন্তু তিনি নির্যাতিত শিশুটির পাশে না দাঁড়িয়ে বরং মেয়েটিকে আরও নির্যাতন করেছেন। স্কুল থেকে বের করে দিয়ে স্কুলে আর যেতে না করেছেন। শিশুটির মাকে ডেকে এনে পর্যন্ত স্কুলে যেতে না করেছেন। আমরা প্রধান শিক্ষিকাকে ডেকেছি রবিবার এ বিষয়ে তার বক্তব্য শুনে এবং তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেব।

জনকণ্ঠ

মন্তব্য করুন