নারায়ণগঞ্জে সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর পরিবার শহরের লক্ষীনারায়ণ আখড়া সংলগ্ন জিউস পুকুরটি জাল দলিল বানিয়ে দখল করেছে এমন অভিযোগ তুলে আবারও প্রতিবাদী গণসমাবেশ হয়েছে।
শনিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে জেলা হিন্দু সম্প্রদায়ের ব্যানারে নগরীর দেওভোগ জিউস পুকুর দীঘিরপাড়ে এই গণসমাবেশে অনুষ্ঠিত হয়। দেবোত্তর সম্পত্তি রক্ষার দাবিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের আয়োজিত এই গণসমাবেশের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে অংশ নেন জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ, জেলা ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, বাংলাদেশ ইয়ার্ন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েন, বাংলাদেশ নিটিং ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, জেলা আইনজীবী সমিতি, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন ও জনপ্রতিনিধিরা।
সমাবেশে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা তার বক্তব্যে দাবি করেন,নগরীর দেওভোগ এলাকার কয়েকশ’বছরের প্রাচীন দেবোত্তর সম্পত্তি লক্ষীনারায়ণ আখড়া ও মন্দির সংলগ্ন ঐতিহাসিক জিউস পুকুরটি দেখভাল করছিল মন্দিরের সেবায়েত ও মন্দির কমিটি। ভুমি জরিপের সিএস (ব্রিটিশ) পর্চায় এই সম্পত্তিটি দেবোত্তর সম্পত্তি হিসেবেই রেকর্ডভুক্ত হয়। কিন্তু, পঁচাত্তুরের পর স্থানীয় একটি চক্র জিউস পুকুরটি দখল করতে মরিয়া হয়ে উঠে। বিভিন্ন সময় জাল ও নকল দলিল তৈরি করে দখলের অপচেষ্টাও করা হয়। বক্তাদের অভিযোগ, প্রায় ১০০ কোটি টাকা মূল্যের এই দেবোত্তর সম্পত্তি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভীর ভাইসহ পরিবারের সদস্যরা দীর্ঘদিন যাবত জাল দলিলের মাধ্যমে দখল করে রেখেছেন। অবৈধ দখলদাররা যেসব নকল ও জাল দলিল তৈরি করেছে তাতে মেয়র আইভীর মা এবং দুই ভাইসহ নিকটাত্মীয় বেশ কয়েকজনের নামও রয়েছে। এই সম্পত্তি রক্ষার দাবিতে মন্দিরের পক্ষ থেকে আদালতে মামলাও চলমান রয়েছে। দেবোত্তর সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয় যোগ্য নয় এবং কাউকে হস্তান্তর করারও কোনও বিধান আইনে নেই উল্লেখ করে এই সম্পত্তি দ্রুত অবৈধ দখল থেকে উদ্ধার করে মন্দির কর্তৃপক্ষের কাছে বুঝিয়ে দিতে সরকারের কাছে দাবি জানান তিনি।
নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ মো. বাদল অবিলম্বে জিউস পুকুর দীঘির পাড়ে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা অপসারণসহ দেবোত্তর সম্পত্তিকে মন্দির কমিটির কাছে বুঝিয়ে দিতে প্রধানমন্ত্রী এবং সরকারের কাছে দাবি জানান।
মিথ্যা মামলা দিয়ে দেবোত্তর সম্পত্তি রক্ষার আন্দোলন কোনোভাবে ঠেকানো যাবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে বক্তারা যে কোনও মূল্যে ভূমিদস্যুদের কবল থেকে নারায়ণগঞ্জের সব দেবোত্তর সম্পত্তি উদ্ধারের জন্য জীবন দিতেও প্রস্তুত বলে ঘোষণা দেন।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি নিম চন্দ্র ভৌমিক বলেন, সারা দেশে হিন্দুর সম্পত্তি দখল করে রেখেছে এমন জনপ্রতিনিধিদের তালিকা তৈরি করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হবে। তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জে মন্দিরের জায়গা মেয়র আইভীর আত্মীয়-স্বজনরা দখল করে রেখেছেন। তিনি অবিলম্বে মন্দিরের জায়গা মন্দির কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য দাবি জানান।
বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর উদ্দেশে বলেন, ‘স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি এখন ক্ষমতায় আছে। নৌকা মার্কা নিয়ে নিবার্চন করে ক্ষমতার মসনদ দখল করে হিন্দু সম্পত্তি দখল করে রাখবেন তা হবে না। দেবোত্তর সম্পত্তি কেনাবেচা হয় না। জাল দলিল করে আপনার পরিবারের সদস্যরা যদি কেউ জমির কাগজপত্র তৈরি করে থাকে তা আদালতে টিকবে না। মন্দিরের জমি মন্দিরকে ফিরিয়ে দিন।’
এর আগে জিউস পুকুর ও লক্ষীনারায়ণ আখড়া মন্দিরের এই দেবোত্তর সম্পত্তি রক্ষার দাবিতে গত ১১ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে প্রথমবারের মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি পালন করে জেলা ও মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদ। কর্মসূচি শেষে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন সংগঠনটির নেতারা। পরবর্তীতে একই দাবিতে ২ ডিসেম্বর নগরীর চাষাড়ায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পালন করা হয় প্রতীকী অনশন। এ অনশনে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা অংশ নেন এবং এ দাবির প্রতি সংহতি জানান।