যশোরের ঝিকরগাছায় মাদ্রাসা শিক্ষকের নির্যাতনে শিশু শিক্ষার্থী ফাতেমা (১১) মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছে। তবে অভিযুক্ত শিক্ষকরা বলেছেন, মেয়েটির ঘাড়ে জিন লেগেছে।এ ঘটনায় রবিবার (২৯ ডিসেম্বর) শিশুটিকে যশোর জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। ফাতেমা ঝিকরগাছা উপজেলার গঙ্গানন্দপুর ইউনিয়নের পুলুম গ্রামের শাহিনুর রহমানের মেয়ে।
ফাতেমার বাবা শাহিনুর রহমান ও মাতা ডলি খাতুন জানান, ফাতেমা খাতুন পুলুম বাজারের সিরাজ মার্কেটের তৃতীয় তলায় মা ফাতিমা মাদরাসায় চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। এক মাস আগে ওই মাদরাসার হেফজ বিভাগের শিক্ষক হুমায়রা খাতুন তাকে মারপিট করে। এক পর্যায়ে মাথা ধরে দেয়ালে প্রচণ্ড আঘাত করে। এতে সে জ্ঞান হারায়। প্রায় এক ঘণ্টা মাথায় পানি দেওয়ার পর তার জ্ঞান ফেরে।
এরপর তাকে বাড়িতে আনা হলে সে ভুল বকতে থাকে। মাদসার শিক্ষক আলমগীর হুসাইন বিষয়টি জানতে পেরে তাকে জিন লেগেছে বলে বিভিন্ন দোয়া কালাম পড়ে ফুঁ দিয়ে দেন। তাতেও কাজ না হলে তিনি চৌগাছা এবং ঝিকরগাছার কয়েকজন ফকিরের কাছে পাঠান। দিন দিন অবস্থা খারাপ হতে থাকলে মাদরাসা থেকে তাকে ছাড়পত্র দিয়ে দেন।
বিভিন্ন জায়গায় কবিরাজ, ফকির দেখানোর পর ফের তাকে ওই মাদরাসায় পাঠানো হয়। অবস্থার এক পর্যায়ে খারাপ হওয়ায় রবিবার যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ফাতেমার মা ডলি বেগম জানান, ঘুমের ট্যাবলেট খাওয়ানো হলেও দিনে রাতে কখনো ঘুম হচ্ছে না। এক জায়গায় থাকছে না। হাসপাতালে সর্বত্রই ছুটে বেড়াচ্ছে।
শিক্ষক হুমায়রা খাতুনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে অপর শিক্ষক আলমগীর হোসেন শিক্ষক হুমায়রা খাতুনের উদ্ধৃতি দিয়ে জানান, ফাতেমার ঘাড়ে জিন আছে। তাই ওরকম করছে। তাকে কোনো আঘাত করা হয়নি।
মা ফাতিমা মাদরাসার শিক্ষক আলমগীর হুসাইন জানান, আগে থেকে ফাতিমার এরকম অবস্থা রয়েছে। তাকে মাথায় কোনো প্রকার আঘাত করা হয়েছে বলে আমার জানা নেই।
যশোর মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক আমিনুর রহমান (মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ) সোমবার দুপুরে (৩০ ডিসেম্বর) ফাতিমাকে চিকিৎসা শেষে সাংবাদিকদের জানান, শিশুটির বর্তমানে মানসিক সমস্যা দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেওয়া হয়েছে। রিপোর্ট আসলে বোঝা যাবে তার কী অবস্থা।
ফাতেমার বাবা শাহিনুর রহমান ও মাতা ডলি খাতুন জানান, মেয়েটির অবস্থা একটু ভালো হলে মাদ্রাসার শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হবে।
ঝিকরগাছা উপজেলার নির্বাহী অফিসার (অতিরিক্ত দায়িত্বে) সাধন কুমার বিশ্বাস জানান, বিষয়টি জানা নেই। যদি কেউ অভিযোগ করে তাহলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রসঙ্গত, মাদরাসা বাংলাদেশ কুরআন শিক্ষাবোর্ডের রেজিস্ট্রেশন নিয়ে কওমি মাদরাসা হিসেবে গত বছর থেকে এ মাদরাসা চালু করা হয়েছে।