রাজবাড়ী সদর উপজেলার বসন্তপুর ইউনিয়নের বাজিতপুর গ্রামের দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক ছাত্রীকে (১৬) জোরপূর্বক মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে অপহরণ করে ধর্ষণ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

 

এ অভিযোগে ২৩ মে রোববার রাজবাড়ীর বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালে প্রিন্স খান (৩০) নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে ওই স্কুলছাত্রী। অভিযুক্ত প্রিন্স খান বসন্তপুর ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের মোতালেব খানের ছেলে।

২৬ মে বুধবার দুপুরে সরেজমিন ওই স্কুলছাত্রীর বাড়িতে গেলে সে জানায়, প্রিন্স খান ও তাদের বাড়ি পাশাপাশি গ্রামে। করোনার আগে স্কুল খোলা থাকার সময় সে স্কুলে যাতায়াতের পথে প্রিন্স তাকে উত্ত্যক্ত করত এবং কুপ্রস্তাব দিত। স্কুল বন্ধ হওয়ার পরও প্রিন্স মোটরসাইকেল নিয়ে তার বাড়ির আশপাশে ঘোরাফেরা করত।

সে তার মাকে বিষয়টি জানালে তার মা প্রিন্সকে নিষেধ করেন। এতে প্রিন্স ক্ষিপ্ত হয়। গত ১৪ মে ঈদের দিন বেলা ১১টার দিকে সে তার খালাতো বোনকে সঙ্গে নিয়ে রাস্তায় ঘুরতে বের হয়। এ সময় তারা বাজিতপুর গ্রামের ভূঁইয়া বাড়ির সামনে রাস্তায় অবস্থানকালে একটি কালো রঙের মাইক্রোবাস তাদের সামনে এসে থামে।

প্রিন্সসহ অপরিচিত আরও দুই যুবক ওই মাইক্রোবাস থেকে নেমে তার মুখ ও হাত-পাঁ চেপে ধরে তাকে মাইক্রোবাসের মধ্যে উঠিয়ে নেয়। এরপর তারা তাকে (ছাত্রীকে) মাইক্রোবাসে করে ফরিদপুরের কামারখালী এলাকার একটি বাড়িতে নিয়ে আটকে রাখে। পরে প্রিন্স তাকে একাধিকবার ধর্ষণ করে।

ওই ছাত্রীর মা বলেন, প্রিন্স আমাদের দূর সম্পর্কের আত্মীয়। সে খুব বখাটে একটা ছেলে। আমি প্রিন্সকে আমার মেয়েকে উত্ত্যক্ত করতে নিষেধ করি। এতে সে ক্ষিপ্ত হয়ে আমার মেয়ের ক্ষতি করার পাঁয়তারা করতে থাকে। ঈদের দিন বেলা ১১টার একটু পর আমার ভাগ্নি আমার কাছে এসে জানায় যে প্রিন্স আমার মেয়েকে উঠিয়ে নিয়ে গেছে। এ খবর শুনে আমি তাৎক্ষণিক প্রিন্সদের বাড়িতে যাই এবং তার মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে ফোন করি।

অনেকবার প্রিন্সের সঙ্গে ফোনে কথা বলার পর সে জানায়, আমার মেয়েকে যদি তার সঙ্গে বিয়ে দেই তাহলে সে আমার মেয়েকে ফেরত দেবে। একপর্যায়ে আমি আমার মেয়েকে তার সঙ্গে বিয়ে দেব বলে স্বীকার করে কৌশলে পরদিন (১৫ মে) বিকাল ৫টার দিকে কামারখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রিন্সের কাছ থেকে আমার মেয়েকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসি। এরপর আমরা থানায় মামলা করতে গেলে থানা কর্তৃপক্ষ মামলা না নিয়ে আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেয়।

যে কারণে আমরা প্রিন্সসহ অজ্ঞাতনামা দুইজনের বিরুদ্ধে রাজবাড়ীর বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালে ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন (সংশোধনী ২০০৩)-এর ৭/৯ (১) ধারায় মামলা দায়ের করেছি।

ছাত্রীর মা আরও বলেন, মামলা দায়েরের পর থেকে এ পর্যন্ত প্রিন্স ও তার পরিবারের লোকজন আমাদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। মামলা তুলে না নিলে তারা আমার মেয়ে ও দুই ছেলেকে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দিচ্ছে। আমরা খুবই আতঙ্কে সময় পার করছি।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত প্রিন্সের বক্তব্য জানতে রাজাপুর গ্রামে তার বাড়িতে গেলে প্রিন্স লাঠি নিয়ে সাংবাদিকদের মারপিট করার জন্য তেড়ে আসে। পরে তার প্রতিবেশীরা তাকে থামিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

যুগান্তর

মন্তব্য করুন