ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলায় পাঁচ মাস আগে ফেসবুকে ধর্মীয় অবমাননাকর পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রতন রায় (৩৯) নামের এক ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার হন। পাঁচ মাস পর রতনের ছোট ভাই রবি রায়ের (৩৫) বিরুদ্ধেও ফেসবুকে ধর্মীয় অবমাননার আরেকটি পোস্ট দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রবি রায় বর্তমানে পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন।

৬ অক্টোবর বুধবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে তাঁকে আটক করে থানায় নেয় পুলিশ।

গত ৭ মে থানায় ফেসবুকে ধর্মীয় অবমাননাকর পোস্ট না দিয়েও এ ধরনের পোস্ট হওয়ার প্রতিকার চাইতে গিয়েছিলেন রবির বড় ভাই ব্যবসায়ী রতন রায় (৩৯)। উল্টো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে ৮ মে দুপুরে আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। রতন ও রবি সরাইল উপজেলার অরুয়াইল ইউনিয়নের অরুয়াইল গ্রামের মৃত অবনী রায়ের ছেলে। তিন ভাইয়ের মধ্যে রবি সবার ছোট। তিনি পেশায় মুদি ব্যবসায়ী। উপজেলার অরুয়াইল বাজারে রতনের কাপড়ের দোকান রয়েছে। ধর্মীয় অবমাননার পোস্টের জেরে গ্রেপ্তার রতন দীর্ঘ পাঁচ মাস ধরেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কারাগারে।

 

পরিবার ও এলাকাবাসীর দাবি, ছবিসংবলিত রবি রায় নামে যে ফেসবুকে আইডি থেকে ধর্মীয় অবমাননাকর পোস্ট দেওয়া হয়েছে, সেটি রবি রায়ের ব্যবহৃত আইডি নয়। রবি রায়ের নিজের চালানো ফেসবুক আইডি এবং মুঠোফোন থেকে এই ধর্মীয় অবমাননাকর পোস্ট দেওয়া হয়নি। তৃতীয় কোনো আইডি থেকে ওই পোস্ট দেওয়া হয়েছে।

পরিবার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, বুধবার সকাল ১০টা ৪৬ মিনিটে ‘রবি রায়’ নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে ধর্মীয় অবমাননাকর পোস্ট করা হয়। বেলা ১১টায় রবিসহ পরিবারের লোকজন পোস্টটি দেখতে পান। পরে তাঁরা বিষয়টি নিয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে সরাইল থানায় যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এরই মধ্যে পৌনে ১২টার দিকে পুলিশ তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সরাইল থানায় নিয়ে যায়। এ ঘটনায় ১২টার দিকে অরুয়াইল ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক হোসেন খন্দকারের নেতৃত্বে অরুয়াইল বাজারে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মুহূর্তেই অরুয়াইল বাজারে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় রবির স্বজনেরা ও হিন্দু সম্প্রদায়ের ব্যবসায়ীরা অরুয়াইল বাজারের দোকানপাট বন্ধ করে দেন। এই পরিস্থিতিতে ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন হলে বেলা তিনটা থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের ব্যবসায়ীরা দোকানপাট খোলা শুরু করেন।
স্থানীয় লোকজন বলেন, রবির বড় ভাই অসিত রায় নৌকার ব্যবসা করেন। গত বছর ৪২ লাখ টাকায় একটি নৌকা কেনেন অসিত রায়। অসিত ও রবি এলাকায় মুদিদোকানও চালান এবং কারাগারে থাকা রতন কাপড়ের ব্যবসা করেন। অরুয়াইল বাজারসংলগ্ন ২০ শতাংশ জায়গায় তাঁদের বাড়িঘর রয়েছে। টাকার অঙ্কে এই জায়গার দাম পাঁচ থেকে ছয় কোটি টাকা। পাশাপাশি গ্রামে ৫-৬ কানি ফসলি জমিও রয়েছে। ধর্মীয় অবমাননাকর পোস্টের অভিযোগ তুলে এক ভাইকে ডিজিটাল মামলায় জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। পরিবার তাঁর জামিন করাতে পারছে না। যে ঘটনায় এক ভাই কারাগারে, সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ছোট ভাই করার কথা না। এলাকায় একটি পক্ষ তাঁদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুণ্ন করতে এবং কোটি টাকার বাড়িঘর ও সম্পত্তি দখল করতেই এ রকম চক্রান্ত করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

 

রবির বড় ভাই অসিত রায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের দোকানে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামের রাহুল রায় নামে এক যুবক হিসাব দেখত। ৬-৭ বছর কাজ করেছে। তার কারণে অনেক টাকা লোকসান হয়েছে। হিসাবের টাকা আত্মসাতের বিষয়টি হাতেনাতে ধরা পড়ার কারণে গত বছর রাহুল দোকান থেকে চলে যায়। রাহুলই রবি ও রতনের মুঠোফোনে ফেসবুক আইডি খুলে দিয়েছে। পাসওয়ার্ডসহ সবকিছু রাহুল জানে। সে দোকান থেকে চলে যাওয়ার পরই দুটি ঘটনা ঘটেছে। তাই তাকেই সন্দেহ হচ্ছে।’ অসিত রায় দাবি করেন, ‘আমার ভাইয়ের ফেসবুক আইডি এবং মুঠোফোন থেকে এই ধর্মীয় অবমাননাকর পোস্ট দেওয়া হয়নি। রবির ছবি দিয়ে খোলা ‘রবি রায়’ নামে অন্য আরেকটি আইডি থেকে এই পোস্ট দেওয়া হয়েছে।

অরুয়াইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘রবি এলাকায় ভালো যুবক হিসেবে পরিচিত। তাঁর বিষয়ে কখনো কোনো বাজে কিছু শুনিনি। বিষয়টি দ্রুত নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে বের হওয়া উচিত।’

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) মোল্লা মো. শাহীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে। আলামতগুলো ঢাকায় বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠানো হয়েছে। অনেকগুলো সংস্থা কাজ করছে। পোস্ট সম্পর্কে এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য আসেনি। আর রবিকে আটক নয়, তাঁকে আমাদের হেফাজতে রেখেছি। অরুয়াইলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’

প্রথম আলো

মন্তব্য করুন