জোর-জবরদস্তি করে জমি রেজিস্ট্রি করার পর পরিবারসুদ্ধ এক হিন্দু গৃহকর্তাকে পুলিশের ভয় দেখিয়ে ভারতে পাচারের ঘটনা ঘটেছে জেলার শ্যামনগর উপজেলার কুলতলি গ্রামে।অভিযোগ পাওয়া গেছে, গ্রামের জামাত নেতা আবদুস সাত্তারের চার ছেলে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও পুলিশের সহযোগিতায় প্রতিবেশী অমূল্য মিস্ত্রীর পুরো পরিবারকে ভারতে পাচার করে তার বিপুল সম্পত্তি দখল করে নেয়। সরজমিন গিয়ে সীমান্তবর্তী ওই গ্রামের লোকজনের কাছ থেকে জানা যায়, কুলতলির অমূল্য ও অজিত মিস্ত্রীর পৈতৃক জমির পরিমাণ ২৮ বিঘা। দুরমুজখালি মৌজার ৩৪ নম্বর খতিয়ানের ১১, ১৪, ১২৪ ও ১২৫ দাগে তাদের এই জমি। একই গ্রামের আবদুস সাত্তারের চার পুত্র রশিদ, রউফ, রাজ্জাক ও গফফারের নজর পড়ে ওই জমির ওপর। এক পর্যায়ে অমূল্যর হাতে কয়েক হাজার টাকা ধরিয়ে দিয়ে বলা হয় কখনো বিক্রি করলে এই জমি তাদেরকেই দিতে হবে। গত নির্বাচনের পর তারা বারবার জমি হস্তান্তরের জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। গত ২৮ নবেম্বর জামাতি রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত সাত্তারের চার পুত্র অমূল্যকে মিথ্যা কথা বলে শ্যামনগর ডেকে নিয়ে যায়। এরপর ভয়ভীতি দেখিয়ে মাত্র দেড়বিঘা জমি রেজিস্ট্রির জন্য চাপ প্রয়োগ করা হয়। এরই মধ্যে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম আলমগীর ও ২/৩ জন পুলিশকে তার সামনে এনে চাপ দিয়ে বলা হয় রেজিস্ট্রি না করলে হাজতে ঢোকানো হবে। চাপের মুখে অমূল্য রেজিস্ট্রি দলিলে স্বাক্ষর করেন। বাড়ি ফেরার পথে সোহালিয়া গ্রামে এলে জমির কথিত গ্রহীতারা তার পথ অবরোধ করে জানায়⎯‘পুলিশের বড়ো অফিসার জানতে পেরেছেন যে তুমি ঘরবাড়ি বিক্রি করে ভারতে চলে যাচ্ছো। ওই পুলিশ কর্মকর্তা এখনই আসছেন এবং আমরাই তোমাকে বাঁচাতে পারি’। একথা বলে নৌকায় উঠিয়ে ভারতে পার করে দেয়। এদিকে অমূল্য বাড়ি না ফেরায় তার উদ্বিগ্ন পরিবারকে জমি গ্রহীতারা জানায় সে আত্মীয় বাড়ি গেছে বলে খবর দিয়ে গেছে। পরদিন ২৯ নবেম্বর রাতে অমূল্যর পরিবারের লোকজন যখন ভাত খাচ্ছিল ঠিক তখনই রশিদ, রউফ, রাজ্জাক ও গফফার ওই বাড়িতে হন্তদন্ত হয়ে এসে জানায়⎯‘গ্রামে পুলিশ এসেছে, তোমাদের সবাইকে গ্রেপ্তার করবে। কারণ অমূল্য বিনা পাসপোর্টে জমি বিক্রি করে ভারতে চলে গেছে।’ অমূল্যর স্ত্রী, ছেলেমেয়ে ও বৃদ্ধা মা এ সময় চিৎকার করতে থাকলে তারা তাদের নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে বাড়ি থেকে অগোছালো অবস্থায় সরিয়ে নিয়ে যায়। ওই রাতেই তাদেরকেও কালিন্দি নদী পার করিয়ে ভারতে সরিয়ে দেওয়া হয়। ঘটনার রাত থেকে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত রশিদ, রাজ্জাক, রউফ ও গফফার তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে অমূল্যর বাড়িতে রয়েছে। তারা প্রচার করছে, তিন বছর আগে অমূল্য ৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা জমি বিক্রি নাম করে গ্রহণ করেছিল। সে সেচ্ছায় ১৪ বিঘা জমিসহ ঘরবাড়ি রেজিস্ট্রি করে দিয়ে গেছে। কট্টর জামাতি হিসেবে পরিচিত ওই চার ব্যক্তির কথা গ্রামের কোনো ব্যক্তি বিশ্বাস করছে না। তারা জানিয়েছে, সাত্তার পরিবার গ্রামের জনৈক লতিফার রহমানের পুত্র শামসুর রহমান ও আমজাদ মোল্লাকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে দলিল সম্পাদনকালে শনাক্তকারী সাক্ষী সাজিয়েছিল। নূরনগর ইউপি চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা গোলাম হায়দার ও কয়েকজন পুলিশ সদস্যকেও অর্থ দিয়ে বশ করা হয়েছে বলে তারা অভিযোগ করেন। এদিকে সাবরেজিস্ট্রি অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,১ লাখ ৪০ হাজার টাকা মূল্য দেখিয়ে ৪ একর ৪৩ শতাংশ জমি রেজিস্ট্রি হয়েছে ৫৮৮২ নম্বর দলিলে। অপরদিকে সাড়ে ১২ হাজার টাকা মূল্যে ৪০ শতাংশ জমি রেজিস্ট্রি হয়েছে ৫৮৮১নম্বর দলিল মূলে। অমূল্যর জমি-বাড়ি দখলের পর জামাতপন্থী ওই গ্রুপটি তার ভাই অজিতের জমিজমাও দখলে নেওয়ার পাঁয়তারা করছে বলে জানা গেছে। অমূল্যর চিংড়ি ঘেরে পুকুরের মাছ ধরছে দখলকারীরা। ৪০টি গাছের নারকেল পাড়ছে নির্দ্বিধায়। গ্রামবাসী এ ব্যাপারে সরাসরি প্রতিবাদ করার সাহস না পেয়ে ইতিমধ্যেই একটি গনআবেদন স্বাক্ষর শুরু করেছে।
ভোরের কাগজ, ৮ ডিসেম্বর ২০০১