ফেসবুক আইডি হ্যাক করে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের গুজব ছড়ানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভোলার বোরহানউদ্দিনে সহিংস বিক্ষোভ ও পুলিশের গুলির ঘটনার পরই সেখানে হিন্দুদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মন্দির এবং বাড়িঘরে হামলা চালিয়েছে কিছু বিক্ষুব্ধ ব্যক্তি। এসব হামলায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু এ সময় মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা এবং বসতবাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
ছবিঃ বিবিসি বাংলা
বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, রবীন্দ্রপল্লী ভাওয়ালবাড়ি এলাকায় এখনো সেদিনকার হামলার চিহ্ন রয়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ওই সংঘর্ষে আহতদের হাসপাতালে নেবার পথে বিক্ষুব্ধ জনতা সেখানে হাসপাতালপাড়া বলে পরিচিত একটি এলাকায় হামলা চালায়। এর আগে বাজারে একজন হিন্দু ব্যক্তির মালিকানাধীন একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা করে। এরপর সেখানকার একটি মন্দির ভাঙচুর হয়। সেখানে সব প্রতিমার মাথা ভেঙে ফেলে হামলাকারীরা। মন্দিরের প্রধান মণ্ডপ তছনছ করে। মন্দির চত্বরেই ভিন্ন মণ্ডপে কালী প্রতিমা ভাঙচুর করে। এ ছাড়া মন্দিরের ভেতরের আসবাবপত্র এবং মন্দিরের ভেতরের রান্নাঘরেও ভাঙচুর চালায় হামলাকারীরা। হামলায় পুড়িয়ে দেয় একটি মোটরসাইকেল। এরপর একই এলাকার আটটি বাড়িতে হামলা চালায় অজ্ঞাত ব্যক্তিরা। এর মধ্যে দুটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে তারা। হামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের একজন লক্ষী রানী দে জানান, তারা আমার ঘর পুড়িয়ে দিয়েছে। ঘরের ভেতরে খাটসহ অন্য আসবাবপত্রেও আগুন দেয় তারা। খালি আগুনই দেয়নি, লুটপাট চালিয়ে নগদ ১০-১৫ হাজার টাকা নিয়ে যায়।
ছবিঃ বিবিসি বাংলা
এ ছাড়া বোরহানউদ্দিন বাজারে শ্রীশ্রী গৌর নিতাই আশ্রম নামক মন্দিরে হামলা চালিয়ে প্রতিমা ভাংচুর করা হয়েছে। সেখানে গত শনিবার কার্তিক-ব্রত নামে মাসব্যাপী এক উৎসব শুরু হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে সে উৎসব বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আশ্রমের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় কুমার দাস জানান, সকাল ১১টার পর যখন হামলা শুরু হয়, অনেকেই বিস্মিত এবং ভীত হয়ে পড়েন। বোরহানউদ্দিনে এমন হামলার ঘটনা খুবই বিরল। ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ভাঙার সময় এখানে হিন্দুদের মন্দির ও বাড়িঘরে হামলা হয়েছিল। এরপর এমন ঘটনা আর কখনো ঘটেনি। তিনি বলেন, মন্দিরের কাছেই অবস্থিত আমার বাড়িতে হামলা চালিয়ে পরিবারের সদস্যদের লাঞ্ছিত করে। হামলায় কেউ মারা যায়নি, কিন্তু আমাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। আমরা নিরাপত্তাহীন বোধ করছি। এসব হামলার ঘটনা নিয়ে মামলা করা হয়নি। গতকাল মঙ্গলবার পুলিশ এবং প্রশাসনের কাছে এ নিয়ে লিখিত অভিযোগ জানানোর কথা। এদিকে পুলিশ বলছে হিন্দুদের ওপর এরপর যাতে আর কোনো হামলা না হয়, সে জন্য বিশেষ সতর্ক রয়েছে তারা। বোরহানউদ্দিন সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এনামুল হক বলেন, এ ধরনের সম্ভাব্য হামলা ঠেকাতে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। পুরো এলাকায় পুলিশের সঙ্গে র্যাব এবং বিজিবি টহল চলছে।
প্রসঙ্গত, গত রবিবার সকালে বোরহানউদ্দিন ঈদগাহ মাঠে এক পর্যায়ে তৌহিদী জনতার ব্যানারের সমাবেশে লোকজনের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে। এ সময় পুলিশ গুলি চালালে চারজন নিহত ও পুলিশসহ বহু লোক আহত হয়। এর আগে তিন দিন ধরে বোরহানউদ্দিনে বিক্ষোভ চলছিল।