সুনামগঞ্জের শাল্লায় দিনমজুর পরিবারের এক গৃহবধূকে একাধিকবার ধর্ষণের চেষ্টা করেছেন স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী পরিবারের এক বখাটে।

 

ওই নারীর পরিবারের লোকজন থানায় একাধিকবার লিখিত অভিযোগ দিলেও পুলিশ মামলা হিসেবে নেয়নি। অবশেষে বাধ্য হয়ে বিচারের দাবিতে ২৮ নভেম্বর শনিবার দুপুরে সুনামগঞ্জ জেলা শহরের শহীদ মিনারে এসে ওই নারীর স্বামী তাঁর মা, স্ত্রী ও দুই শিশুসন্তানকে নিয়ে মানববন্ধন করেছেন।

ওই নারীর স্বামী (৩৮) বলেন, তিনি কৃষিশ্রমিক। স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে এবং বৃদ্ধা মা-বাবা নিয়ে তাঁর সংসার। বাবা অসুস্থ। একই গ্রামের বাসিন্দা প্রজেশ দাস (৩২) তাঁর স্ত্রীকে প্রায়ই কুপ্রস্তাব দিতেন। ওই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ১৮ নভেম্বর বিকেলে মদ্যপ অবস্থায় প্রজেশ তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে অশালীন আচরণ করেন। তিনি তখন ধান কাটার শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে মৌলভীবাজারের বড়লেখায় ছিলেন। এ ঘটনায় তাঁর স্ত্রী ওই দিনই শাল্লা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন। পরে ২১ নভেম্বর রাতে মদ্যপ অবস্থায় প্রজেশ ঘরের বেড়া ভেঙে ভেতরে ঢুকে তাঁর স্ত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। এ সময় তাঁর স্ত্রী ও বাড়িতে থাকা বৃদ্ধ বাবার চিৎকারে তিনি পালিয়ে যান। খবর পেয়ে তিনি মৌলভীবাজার থেকে বাড়িতে আসেন এবং থানায় আরেকটি অভিযোগ দেন।

এসআই সেলিম বলেছেন, থানায় মামলা রেকর্ড করতে ১০ হাজার টাকা লাগবে। আমি গরিব মানুষ। খেয়ে না খেয়ে আমাদের দিন যায়, টাকা পাব কই?

ওই স্বামীর ভাষ্য, থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সেলিম মিয়া ঘটনা তদন্তে যান। তদন্ত শেষে গ্রাম থেকে ফেরার সময় তাঁকে বিষয়টি আপস মীমাংসা করার প্রস্তাব দেন। ২৩ নভেম্বর আবার শাল্লা থানার ওসির সঙ্গে দেখা করেন তিনি। এ সময় স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য এবং তাঁর মা-বাবাও উপস্থিত ছিলেন। সবার উপস্থিতিতে থানায় এসআই সেলিম মিয়া তাঁদের পরিবার খারাপ বলে ওসিকে জানান। এ সময় তাঁরা এর প্রতিবাদ করেন। একপর্যায়ে ইউপি সদস্য ওসিকে তাঁদের পরিবার ভালো বলে জানালে ওসি ওই এসআইয়ের ওপর ক্ষুব্ধ হন। ওসি আবার তদন্ত করাবেন বলে কথা দিয়ে তিন দিন তাঁদের অপেক্ষা করতে বলেন। তিন দিন অপেক্ষা করে আবার যোগাযোগ করেও কোনো ফল পাননি তাঁরা। তিনি অভিযোগ করেন, ‘এসআই সেলিম বলেছেন, থানায় মামলা রেকর্ড করতে ১০ হাজার টাকা লাগবে। আমি গরিব মানুষ। খেয়ে না খেয়ে আমাদের দিন যায়, টাকা পাব কই?’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শাল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাজমুল হক বলেন, ওই নারীর পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পর একজন কর্মকর্তাকে দিয়ে তিনি বিষয়টি তদন্ত করিয়েছেন। কিন্তু প্রাথমিকভাবে অভিযোগের সত্যতা পাননি তাঁরা। প্রজেশ দাসের সঙ্গে ওই পরিবারের জমিজমা নিয়ে বিরোধ আছে। তারপরও তিনি ওই নারীর স্বামীকে বলেছিলেন, দু-এক দিন অপেক্ষা করতে। তিনি আরেকজন কর্মকর্তা দিয়ে আবার তদন্ত করাবেন। ইতিমধ্যে বিষয়টি সামাজিকভাবেও মীমাংসার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু মীমাংসা মানেনি পরিবারটি।

ওসি বলেন, ‘প্রজেশ এমনিতে মাদকসেবী বলে জেনেছি। তিনি প্রায়ই মদ্যপ অবস্থায় ওই নারীর পরিবারের লোকজনকে গালমন্দ করেন। আমাদেরও গালাগাল করেছেন। আমরা তাঁকে খুঁজছি। একজন মাদকসেবী হিসেবে পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।’

প্রথম আলো

মন্তব্য করুন