রাষ্ট্র ও সরকারের মন্ত্রীদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের অভিযোগ এনে তেল গ্যাস বন্দর ও জাতীয় সম্পদ রক্ষা কমিটির জেলা আহ্বায়ক ও নিহত ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বির বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার আবেদন করেছেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মহসিন মিয়া।

 

৩১ আগস্ট মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে (ক অঞ্চল) এই মামলার আবেদন করা হয়। মামলার আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ হুমায়ন কবীর বিষয়টি প্রাথমিক তদন্তে সঠিক হলে সেটিকে মামলা হিসেবে রুজু করতে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা সেতুসহ ২টি মহাসড়কের নামকরণ নিয়ে রফিউর রাব্বি দাবি করেন, ‘অর্থের বিনিময়ে মন্ত্রী-আমলারা এসব স্থাপনার নামকরণ করেছে’। মামলার বাদী মহসিন মিয়ার দাবি, রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে এসব স্থাপনার নামকরণ হয়েছে। রফিউর রাব্বির এমন মন্তব্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে রাষ্ট্রপতি তথা রাষ্ট্রের বিরোধিতা করারই শামিল। অপরদিকে রফিউর রাব্বি জানিয়েছেন, তিনি মামলা সম্পর্কে এখনও কিছু জানেন না।

দায়ের করা মামলার আবেদনের নথি থেকে জানা গেছে, চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় বন্দর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশীদ বন্দর উপজেলায় নির্মাণাধীন তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুটি প্রয়াত সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম নাসিম ওসমান সেতু, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের সাইনবোর্ড থেকে চাষাঢ়া পর্যন্ত নির্মাণাধীন ৮ লেনের আঞ্চলিক মহাসড়কটি মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও ভাষাসৈনিক স্বাধীনতা পদকে ভূষিত (মরণোত্তর) এ কে এম সামসুজ্জোহা সড়ক এবং চাষাঢ়া থেকে আদমজী পর্যন্ত আঞ্চলিক মহাসড়কটি প্রয়াত ভাষাসৈনিক বেগম নাগিনা জোহা সড়ক হিসেবে নামকরণের প্রস্তাব রাখেন। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে বিষয়টি সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আকারে পেশ করা হয়।

গত ২৫ মে ৩টি পৃথক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে উক্ত ৩টি স্থাপনাকে নামকরণের ঘোষণা দেওয়া হয়। এতে নারায়ণগঞ্জের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ আনন্দ প্রকাশ করেন। কিন্তু গত ৮ জুন নারায়ণগঞ্জ শহরের আলী আহাম্মদ চুনকা মিলনায়তন চত্বরে একটি অনুষ্ঠানে রফিউর রাব্বি তার বক্তব্যে বলেন, ‘সরকারের মন্ত্রী-আমলারা টাকা খেয়ে নারায়ণগঞ্জের রাস্তা ও স্থাপনার নামকরণ করেছে। যে সকল মন্ত্রী-আমলারা এ নামকরণ করেছেন তাদের কাছে জানতে চাই, যাদের নামে নামকরণ করা হয়েছে নারায়ণগঞ্জে বা দেশে তাদের অবদান কি? খুন খারাবি লাশ ফালানো এই যোগ্যতার মধ্যে পরে কি না? মেন্ডেট ছাড়া সরকার বলেই জনমতের তোয়াক্কা না করে যা ইচ্ছা তাই করে চলেছে।’

এদিকে আদালত সূত্র জানায়, অ্যাডভোকেট মহসিন মিয়ার মামলার আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারক গত ৩১ আগস্ট নির্দেশনায় লিখেছেন, ‘আনীত অভিযোগসমূহ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫, ২৯, ৩১ ধারায় আমলযোগ্য, যা সত্যতা নির্ণয়ের দাবি রাখে। এমতাবস্থায় অভিযোগসমূহ প্রাথমিক অনুসন্ধানের মাধ্যমে সঠিক মর্মে প্রতীয়মান হলে এফআইআর হিসেবে রুজু করার জন্য নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসিকে নির্দেশ দেওয়া গেল’।

মামলার বাদী ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মহসিন মিয়া জানান, যে তিনজনের নামে শীতলক্ষ্যা সেতু ও ২টি মহাসড়কের নামকরণ করা হয়েছে তারা তিনজনই প্রয়াত। তাঁদের মধ্যে দুজন ভাষাসৈনিক, একজন স্বাধীনতাযুদ্ধের সংগঠক এবং অপরজন একাধিকবারের নির্বাচিত এমপি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা। তা ছাড়া এত বিশাল পরিধির স্থাপনা নামকরণের নেপথ্যে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছা ছিল বলেই হয়েছে। সেখানে বিবাদী রফিউর রাব্বির এমন বক্তব্য রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী তথা রাষ্ট্রের বিরোধিতা ও অবমাননার শামিল।

যদিও বিষয়টি এখনও জানেন না বলে জানিয়েছেন কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক নেতা ও নিহত তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি। তিনি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বিষয়টি এখনও শুনিনি। মামলা হয়ে থাকলে সেটি আইনি প্রক্রিয়াতেই জবাব দেব।

অপরদিকে বুধবার বিকেলে এ ব্যাপারে সদর মডেল থানার ওসি শাহ জামান জানিয়েছেন, আমি এখনও আদালতের কোনো নির্দেশের কপি পাইনি। তবে আদালতের নির্দেশ পেলে সে অনুসারেই আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

তবে মামলার বাদী মহসিন মিয়া বলেন, গত ৩১ আগস্ট মঙ্গলবার সন্ধ্যাতেই জরুরি ভিত্তিতে আদালত থেকে নির্দেশনামাটি সদর মডেল থানায় জমা হয়েছে, যার স্মারক নম্বর ৪৯৪৬ এবং এর কপিও আমার কাছে রয়েছে।

কালের কণ্ঠ

মন্তব্য করুন