চাঁদপুর চৌধুরীঘাটে একটি হাফিজিয়া মাদ্রাসায় সাত শিক্ষার্থীকে বলাৎকার ও নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এর প্রতিবাদে অভিযুক্ত শিক্ষকের শাস্তির দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে বিভিন্ন কক্ষে ভাঙচুর চালিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
৩ অক্টোবর বৃহস্পতিবার বিকালে ওই ভাঙচুরের ঘটনার পর অভিভাবকরা এসে তাদের সন্তানদের বাসায় নিয়ে গেছেন। আর ৪ অক্টোবর শুক্রবার এলাকাবাসী মাদ্রাসাটি বন্ধ করে দিয়েছেন।
চাঁদপুর শহরের চৌধুরীঘাট তাজমহল বোর্ডিয়ের পাশে অবস্থিত পৌর মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত কোরআনিয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও এতিম খানায় এ ঘটনা ঘটে।
ঘটনাস্থলে গিয়ে এলাকাবাসী ও অভিভাবকদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, শহরের চৌধুরীঘাট এলাকায় অবস্থিত মাদ্রাসাটি নামে এতিম খানা হলেও এটি মূলত শিক্ষার্থীদের অর্থে পরিচালিত হয়। শিশু শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মাসে প্রায় চার হাজার টাকা নেয়া হতো। কিন্তু খাবার দেয়া হত নিম্ন মানের। মাদ্রাসা ও এতিমখানা নাম ব্যবহার করা হলেও প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে মাসে ৪ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়। অথচ, এখানে এতিম ছাত্র ভর্তি করা হয়নি। মাদ্রাসায় ৫০জন শিক্ষার্থীর জন্য নজরানা ও হেফজখানা মাত্র চারজন শিক্ষক দিয়ে পরিচালিত হচেছ। প্রত্যেক মাসে এ মাদ্রাসায় কমপক্ষে দুই লাখ টাকা আয় থাকলেও শিক্ষার্থীদেরকে নিন্মমানের খাবার পরিবেশন করা হয়। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ একরাম হোসেন তার কমিটিতে সাবেক জজ ও প্রভাবশালীদের নাম প্রচার করে মাদ্রাসা পরিচালনার অর্থ আত্মসাৎ করে যাচেছন বলে অভিযোগ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মাদ্রাসাটির ভেতরের পরিবেশ খুবই খারাপ। এখানে যে সব শিক্ষার্থী সুস্থ ভর্তি হয়, তারা কয়েক দিনের মাথায় অসুস্থ হয়ে পড়লেও তাদেরকে কোনো প্রকার চিকিৎসা ব্যবস্থা রাখা হয়নি। আর শিক্ষার্থীদের ওপর একরকম নির্যাতনই চালানো হতো। বেদম পেটানো হতো লেখাপড়া শেখানোর নামে ও অনৈতিক কাজে সায় না দিলে। শিক্ষার্থীরা জখমের চিহ্ন পুলিশ, সংবাদকর্মী ও অভিভাবকে দেখিয়েছে। তাদের শরীর ফেটে ক্ষত হয়ে রয়েছে।
ছাত্ররা জানায়, তাদের শিক্ষক আব্দুল খালেক তার ইচ্ছামত ছাত্রদেরকে ডেকে নিয়ে বলাৎকার করতেন। কেই প্রতিবাদ করলে তার ওপরে নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যেত।
২ অক্টোবর মাদ্রাসার এক ছাত্রকে ডেকে নিয়ে রাতে তার মশারির ভেতরে ঢুকতে বলেন ওই শিক্ষক। সে প্রবেশ করার পর প্রথমে তাকে দিয়ে শরীরে ওষুধ মালিশ করান। এক পর্যায়ে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে মুখ চেপে ধরে বলাৎকার করে রক্তাক্ত করে ফেলেন। পরে সকালে ছাত্র শেখ মোহাম্মদ ঘটনাটি মাদ্রাসার অন্য ছাত্রদের ও তার অভিভাবককে ফোন করে জানায়। এ নিয়ে সাত ছাত্রকে বলাৎকার করেছেন বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। এর পরদিন বৃহস্পতিবার সকালে আরেক ছাত্র বলাৎকারে রাজি না হওয়ায় তাকে শিক্ষক আব্দুল খালেক বেদম পিটিয়ে আহত করেন। এর পরই দীর্ঘদিন ধরে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা মাদ্রাসায় ভাঙচুর করে বিক্ষোভ দেখায়।
যৌন নির্যাতনের শিকার কোমলমতি শিক্ষার্থীরা এ প্রতিবেদকের কাছে তাদের দাবি জানায়, তাদের ভাষায়, ‘আব্দুল খালেক অনেক খারাপ হুজুর। আমাদের অনেক কষ্ট দিয়েছে। ওই খারাপ হুজুরকে ধরে এনে পেটান’।
চাঁদপুর মডেল থানার ওসি মো. নাছিম উদ্দিন বলেন, ঘটনা অবগত হয়ে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। নির্যাতিতরা অভিযোগ দিলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।