বগুড়ায় ফেসবুকে আপত্তিকর ছবি ছড়ানোয় মাইসা ফাহমিদা সেমন্তি (১৪) নামে এক স্কুলছাত্রী আত্মহত্যা করেছে। আত্মহত্যার আগে সুইসাইড নোটে একজন বন্ধুর কথাও উল্লেখ করেছে মাইসা। তার বাবা আত্মহত্যায় প্ররোচনাকারীদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিতে গেলেও পুলিশ সেই অভিযোগ গ্রহণ করেনি।
দুই সপ্তাহ ধরে পুলিশের কাছে ধরনা দেয়ার পর মাইসার বাবা হাসানুল মাশরেক মেয়ে হারানোর ক্ষোভ, কষ্ট ও হতাশার কথা জানিয়ে গত মঙ্গলবার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। স্ট্যাটাসের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। অভিযোগ রয়েছে মাইসা আত্মহত্যার প্ররোচনাকারীদের একজন পুলিশের পদস্থ কর্মকর্তার ভাতিজা হওয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
মাইসা ফাহমিদা বগুড়া শহরের ওয়াইএমসিএ পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। গত ১৭ জুন রাতে নিজ বাসায় শয়নকক্ষে মাইসা গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ফ্যানের সঙ্গে ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করে। পরদিন সকালে তার মরদেহ উদ্ধারের পর পরিবারের লোকজন মাইসার লিখে যাওয়া সুইসাইড নোটটি পান। সুইসাইড নোটে মাইসা আত্মহত্যার বিস্তারিত কারণ উল্লেখ না করলেও আবির নামে এক বন্ধুর নাম লেখেন। পুলিশ মরদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত শেষে ইউডি মামলা করে।
মাইসার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সুইসাইড নোট উদ্ধারের পর মাইসার মুঠোফোনের কললিস্ট ও ফেসবুকে ম্যাসেঞ্জারে তথ্য আদান-প্রদান ছাড়াও সহপাঠী ও বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলে তারা জানতে পারেন, আবির নামে এক ছেলের সঙ্গে মাইসার সর্ম্পক ছিল। আবির বিভিন্ন সময় মাইসার মুঠোফোনে কথাও বলেছে। মাইসা ফাহমিদা নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে ম্যাসেঞ্জারে আবিরকে একান্ত কিছু ছবি আদান-প্রদান করে মাইসা। সেই ছবি ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপে ছড়িয়ে দেয়া হয়। এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে শাহরিয়ার অন্তর নামের আরও এক যুবক জড়িত। এ ঘটনায় অপমান সইতে না পেরে লজ্জা ও ক্ষোভে আত্মহত্যা করে মাইসা।
মাইসার বাবা হাসানুল মাশরেক বলেন, আবির নামে এক ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল মাইসার। যে রাতে সে আত্মহত্যা করেছে সেই রাতে মেয়ে তাকে বলেছিল, আবিরকে বিশ্বাস করে তার ম্যাসেঞ্জারে কিছু ছবিও পাঠিয়েছিলাম। সে সেই ছবি ভাইরাল করে দিয়েছে।
হাসানুল মাশরেক আরও বলেন, মাইসা আত্মহত্যার ঠিক একদিন আগে আবির আমাকে ফোন করে বলেছিল, মাইসাকে দেখে রাখবেন ও আত্মহত্যা করতে পারে। এখন প্রশ্ন হলো, মাইসা আত্মহত্যা করবে সেটা আবির আগে থেকেই জানলো কী করে।
তিনি আরও বলেন, আবির ছাড়াও শাহরিয়ার অন্তর নামে এক বখাটে মাইসাকে প্রায়ই উত্ত্যক্ত করতো। তাদের দুজনের বিরুদ্ধেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করতে চাই। কিন্তু পুলিশের এক পদস্থ কর্মকর্তার ভাতিজা হওয়ায় আবিরের বিরুদ্ধে মামলা নিচ্ছে না পুলিশ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পুলিশের এই পদস্থ কর্মকর্তা আগে দিনাজপুর জেলায় ছিলেন। বদলি সূত্রে তিনি বর্তমানে চট্রগ্রামে রয়েছেন। আবির তার ভাতিজা। বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলায় তাদের বাড়ি হলেও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে আবির বগুড়া শহরের মালতিনগর এলাকায় থাকে।
জানতে চাইলে বগুড়া সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম বদিউজ্জামান বলেন, মেয়েটির আত্মহত্যার পর তার বাবা অন্তর নামে একজনের বিরুদ্ধে প্ররোচনার অভিযোগ তুলেছিলেন। এখন আবার আবির নামে আরেকজনের নামে অভিযোগ তোলা হচ্ছে। আবির যে আত্মহত্যার পেছনে জড়িত তার কোনো তথ্য-প্রমাণ দিতে পারেনি মাইসার পরিবার। এ কারণে অভিযোগটি গ্রহণ করা হয়নি।
জেলা পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিটের একটি সূত্র জানায়, বগুড়ায় একটি চক্র স্কুল-কলেজের মেয়েদের আইডি হ্যাক করে বিভিন্ন ভাবে ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করছে। ইতিমধ্যে এ ধরনের অন্তত ১০টি অভিযোগ তাদের হাতে রয়েছে। এসব অভিযোগ তদন্ত করে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার তৎপরতাও অব্যাহত রয়েছে। তবে মাইসা আত্মহত্যার বিষয়টি তাদের জানা নেই।