বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ থেকে উগ্র ও সন্ত্রাসবাদী কাজে জড়িত থাকার সন্দেহে মোহাম্মদ আলী খান (২৩) নামে এক জঙ্গিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।
১৬ জুন মঙ্গলবার ভোর ৫টা দশ মিনিটে মোরেলগঞ্জ উপজেলার উত্তর সরালিয়া গ্রামের বাড়ি থেকে পুলিশ এই তরুণকে গ্রেপ্তার করে। তবে এ সময় তার কাছ থেকে পুলিশ কোনো জিহাদি বই বা জঙ্গি তৎপরতা চালানোর সমরঞ্জাম পায়নি।
১৭ জুন বুধবার দুপুরে বাগেরহাটের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জেলার কর্মরত সাংবাদিকদের এ তথ্য জানানো হয়।
গ্রেপ্তার মোহাম্মদ আলী খান মোরেলগঞ্জ উপজেলার মনোয়ারা বেগম ইসলামিক মহিলা দাখিল মাদ্রাসা এবং এস এ ক্যাডেট একাডেমির নৈশ প্রহরি (সিকিউরিটি গার্ড) হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
তিনি মোরেলগঞ্জ উপজেলার উত্তর সরালিয়া গ্রামের খান মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনির ছেলে। এর আগে তিনি কখনো পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হননি। তার বিরুদ্ধে বাগেরহাটের কোনো থানায় মামলাও নেই।
বাগেরহাটের পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায় সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া মোরেলগঞ্জ উপজেলার সরালিয়া গ্রামের মোহাম্মদ আলী খান নামে এই তরুণ ১১ জুন তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক আইডি এবং ইউটিউবে একটি ভিডিও আপলোড করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া ভিডিওটি পুলিশের হাতে আসার পর পুলিশ তার খোঁজে মাঠে নামে।
পুলিশ জানায়, সেই ভিডিও বার্তায় তিনি দেশের বিভিন্ন বাহিনীতে কর্মরত সদস্যদের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে জিহাদের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি তার এই উস্কানিমূলক বক্তব্যের মাধ্যমে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করছেন।
পুলিশ জানায়, ভিডিওতে বক্তৃতায় তিনি নিজেকে ইসলামিক আর্মি ফোর্সের একজন সদস্য (আইএএফ) হিসেবে পরিচয় দেন। তার দেওয়া এই বক্তব্য যদি কেউ না শোনে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ারও হুঁশিয়ারি দেন। তার এ জিহাদের জন্য মানুষের কাছে আর্থিক সহযোগিতা চেয়েছেন। সেজন্য তার ব্যক্তিগত বিকাশ ও ব্যাংক একাউন্ট নাম্বারও প্রকাশ করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার ছাড়া ভিডিও বার্তাটি পুলিশের কাছে উগ্র ও জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ডের অংশ বলে মনে হচ্ছে। আমরা তার কর্মকাণ্ডে কারা কারা জড়িত তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত শুরু করেছি। তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানান হবে। বুধবার বিকেলে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাগেরহাট জেলা পুলিশের একাধিক উর্দ্ধতন কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে বলেন, পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার তরুণ খুব বেশি পড়ালেখা জানে না। তবে তিনি ইসলামি চিন্তাধারায় বিশ্বাসী। নিয়মিত নামাজ পড়েন। মোরেলগঞ্জে মাদ্রাসায় নৈশ প্রহরি পদে চাকরি করার আগে ২০১৯ সালে লক্ষীপুর জেলার বলগেট এলাকায় আরেকটি চাকরি করতেন। সেখানে থাকা অবস্থায় এই তরুণ ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে একটি ফরম পূরণের মাধ্যমে ইসলামিক আর্মি ফোর্সেস (আইএএফ) নামের একটি কথিত সংগঠনের সদস্য পদ পান বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেন। আমরা তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ি আইএএফ নামে কোনো সংগঠন এই দেশে আছে কিনা তার খোঁজ খবর নিয়েছি। আমরা এখনো এই ধরনের কোন সংগঠনের অস্তিত্ব খুঁজে পাইনি।
তারা আরো বলেন, এই তরুণ নিজে নিজে একটি ভিডিও তৈরি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে নিজেই একটা জিহাদি সংগঠন গড়ার চেষ্টা করছে বলে মনে হচ্ছে। পুলিশ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। তার নামে বাগেরহাটের কোনো থানায় মামলা না থাকলেও এই ঘটনাটিকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
তার সঙ্গে আর কারা জড়িত তা বের করতে এই তরুণকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করতে রিমান্ড চাওয়া হবে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তারা।