রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার ধর্মীয় সংখ্যালঘু অধ্যুষিত বুজরুক কোলা গ্রামে শুক্রবার গভীর রাতে আটটি বাড়িতে একদল চিহ্নিত দুস্কৃতকারী হামলা চালিয়ে ব্যপক লুটপাট ও ভাংচুর করেছে। এর মধ্যে চারটি বাড়িতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। এ সময় বেশ কয়েকজন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্য আহত হন । এদের মধ্যে আহত অমর চন্দ্র সরকারের অবস্থা গুরুতর। গভীর রাত থেকে ভোর পর্যন্ত চলা এই হামলার পরপরই কোলা গ্রামের অধিকাংশ সংখ্যালঘু পরিবার আতঙ্কে গ্রাম ছেড়ে পাশের তানোর ও অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। জেলার বাগমারার বুজরুক কোলা গ্রামে ক্ষতিগ্রস্থ কয়েকটি সংখ্যালঘু পরিবার গ্রাম ছেড়ে রাজশাহীতে আশ্রয় নিয়েছেন। তারা জানান, শুক্রবার দিবাগত রাত ৮টার দিকে মোসলেম নামের এক ব্যক্তির নেতৃত্বে ৩০০ সন্ত্রাসী ছয়-সাতটি ট্রাকে করে কোলা গ্রামে আসে । আনন্দমিছিল করার নামে সন্ত্রাসীরা গ্রামের একটি আমবাগানে জড়ো হয়। নির্বাচনে চারদলীয় জোটের বিজয় উপলক্ষে তারা আমবাগানে কিছুক্ষণ আনন্দমিছিল করে । রাত বাড়তে থাকলে সন্ত্রাসী দলটি সেখানে রান্নাবান্না করে। এ সময় সন্ত্রাসীরা অমর চাঁদ সরকারের পুকুর থেকে বিনা অনুমতিতে কয়েক মণ মাছ ধরে। রাত ১২টার দিকে সন্ত্রাসী দলটি কোলা গ্রামের সংখ্যালঘু পরিবারের বাড়ি গুলোতে লুটপাট শুরু করে। সংখ্যালঘুরা তাদের বাড়িঘরের দরজা জানালা বন্ধ করেও রক্ষা পাননি। সন্ত্রাসীরা লোহার রড ও শাবল দিয়ে এসব বাড়ির দরজা-জানালা ভেঙে ঘরে ঢুকে লুটপাট চালায়। অমর, মনোরঞ্জন, অজিত, জিতেন , উজ্জ্বল, বিশ্বনাথ, ধীরেন মাস্টারের বাড়ি লুট হয়েছে বলে জানা গেছে। হামলা শুরুর পরপরই গ্রামের অধিকাংশ মহিলা প্রতিবেশীদের বাড়িঘরে অথবা পার্শ্ববর্তী গ্রামে গিয়ে আশ্রয় নেন। এরপরও কয়েকটি পরিবারের মহিলারা এ সময় লাঞ্ছিত হন। এদিকে এলাকার কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তির সহায়তায় ক্ষতিগ্রস্থরা মামলা করার জন্য বাগমারা থানায় গেলে পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে মামলা নিতে অস্বীকার করে। একটি অভিযোগপত্র ক্ষতিগ্রস্থরা থানায় রেখে যান। পরে অবশ্য থানা কতৃপক্ষ এটি রেকর্ড করে।
দৈনিক প্রথম আলো, ১৪ অক্টোবর ২০০১