গত ১ অক্টোবর জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী লুটপাট, হামলা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, মারধর, সম্পত্তি দখল প্রভৃতি ঘটনার মাধ্যমে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর অমানবিক নির্যাতন চলছে বলে উল্লেখ করে চট্টগ্রামের ১৪০ জন আইনজীবী তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। তারা বলেন, এসব ঘটনায় মনুশ্যত্ব ও মানবতাবোধ পদদলিত হয়েছে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় প্রশাসনের নাকের ডগায় এতসব জঘন্য ঘটনা ঘটতে থাকলেও প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করে। বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করার পরও তা অব্যাহত রয়েছে বলেও অভিযোগ করেন। বিবৃতিতে তারা বলেন, এসব নারকীয় ঘটনার জন্য ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করবে না। তারা এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারপতির নেতৃত্ব গণতদন্ত কমিটি গঠন করে নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। বিবেকবান সকল মানুষকে দলমত নির্বিশেষে এসবের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য তারা আহ্বান জানান। বিবৃতিদাতাদের মধ্যে রয়েছেন ̈অ্যাডভোকেট এ কে এম এমদাদুল ইসলাম, এস এম সামসুল ইসলাম, মোঃ শফিকুল ইসলাম, মাহবুব উদ্দিন আহমেদ, আনোয়ারুল ইসলাম, মোঃ খোরশেদ আলম চৌধুরী, আবু মোঃ হাশেম, এ কে এম সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, মোঃ সালেহ উদ্দিন, হায়দার সিদ্দিকী, ইফতেখার সাইফুল চৌধুরী, খালেক নেওয়াজ, এডভোকেট মোঃ আবু হানিফ প্রমুখ। কেন্দ্রীয় পূজা পরিষদঃ চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি এডভোকেট সুভাষ চন্দ্র লালা ও সাধারণ সম্পাদক শ্যামল পালিত এক যুক্ত বিবৃতিতে দেশে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর জুলুম, নির্যাতন, লুটপাট, হামলা, হুমকি ও অগ্নিসংযোগসহ জঘন্য ঘটনার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের বৃহত্তর ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা অতসন্ন । এ অবস্থায় এসবের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে হিন্দু সম্প্রদায় পূজা উদ্যাপনের মতো কোন পরিবেশ পাবে না: হিন্দুরা চরম আতঙ্কে ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। অবিলম্বে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নেতৃত্ববৃন্দ সরকারের প্রতি দাবি জানান। মাগুরায় ৩ ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় উদ্বেগ বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ মাগুরার শ্রীপুর থানায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ৩ ছাত্রীকে অপহরণ ও ধর্ষণের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। গতকাল শনিবার এক বিবৃতিতে পরিষদ এ বিষয়ে মামলা দায়ের ও অপরাধীদের গ্রেফতার করে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট পক্ষের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন। বিবৃতিতে বলা হয়েছে নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও নারীর প্রতি অত্যাচারের ঘটনা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। এদিকে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) সভাপতি অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ ফায়জুল্লা দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা এবং সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে রুখে দাঁড়ানোর জন্য অসাম্প্রদায়িক দল, শক্তি ও ব্যক্তির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এক বিবৃতিতে তারা বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে এবং পরে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর অত্যাচার, বাড়িঘর লুটপাট, শারীরিকভাবে লাঞ্ছনা এবং নারীনির্যাতনের পাশবিক ঘটনা ঘটেই চলেছে। কোন কোন স্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন বাড়িঘর ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। তারা বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসব ঘটনা দেখেও না দেখার ভান করেছিল। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এদেশে আগেও হয়েছে⎯প্রধান নির্বাচন কমিশনার একথা বলে ঘটনাকে আড়াল করতে চেয়েছেন। নবনির্বাচিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী সুষ্ঠভাবে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েই দায়িত্ব শেষ করেছেন। তারা বলেন, আমরা সারা দেশে সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণের সুষ্ঠ বিচার চাই, মানবতাবিরোধী সাম্প্রদায়িক কর্মকাণ্ডের হোতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা চাই। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি।
সংবাদ, ১৪ অক্টোবর ২০০১