চার বছরের অবুঝ শিশু। আর কিছুদিন পর সে স্কুলে যাবে। পরিচয় হিসেবে মায়ের নামের সঙ্গে জুড়ে দিতে হবে বাবার নামও।
শিশুটি বড় হচ্ছে। কিন্ত জানে না কে তার বাবা। আর বাবার পরিচয় ছাড়াই মায়ের কাছে গত চার বছর থেকে লালন পালন হয়ে আসছে।
ভুক্তভোগীর পরিবার আদিবাসী সম্প্রদায় এবং ছেলের পরিবার হিন্দু হওয়ায় জটিলতা দেখা দিয়েছে।
এই অসহায় পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার একটি আদিবাসী পরিবার। আর যুবক চন্দন কুমার হিরো (২৬) একই উপজেলার আধাইপুর ইউনিয়নের লক্ষিকোলা গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের পরিতোষ চন্দ্র মন্ডলের ছেলে।
এদিকে ধীর গতির কারণে থমকে আছে মামলার রায়ও। ভুক্তভোগী পরিবারের দাবি, দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি হয়ে শিশুটি তার বাবার পরিচয় এবং মা তার স্বামীর অধিকার ফিরে পাক।
ভুক্তভোগী পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালে দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় আদিবাসী সম্প্রদায়ের কিশোরী মেয়েকে বিভিন্ন ভাবে উত্ত্যক্ত করতো হিন্দু সম্প্রদায়ের যুবক চন্দন কুমার হিরো। এক সময় তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। এরপর তা গড়ায় শারীরিক সম্পর্কে। বিয়ের প্রলোভনে দিয়ে একাধিকবার তাদের মধ্যে সম্পর্ক হয়। এক পর্যায়ে কিশোরী মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা হয় পড়ে। এরপর মেয়েটি বার বার হিরোকে বিয়ের জন্য বললেও কোনো কর্ণপাত করেনি সে। এক সময় দূরত্ব বাড়তে থাকে। মেয়েটি যখন চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা তখন বিষয়টি সে তার পরিবারকে জানায়। এরপর যুবক হিরো বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়।
পরে গত ২০১৬ সালের ১২ এপ্রিল বিষয়টি স্থানীয় ভাবে চেয়ারম্যান, মেম্বার ও গ্রামের মোড়লরা সমাধানের চেষ্টা করে।
গ্রামের মোড়ল আব্দুর রশিদ বলেন, আদিবাসী মেয়ের পরিবারটি নিতান্ত অসহায়। আর ছেলের পরিবার স্বচ্ছল। প্রায় চার বছর আগে শালিসে ছেলের বাবা মেয়েকে পুত্রবধূর স্বীকৃতি দিবে বলে বাড়ি নিয়ে যায়। কিন্তু তার উপর চলে অমানবিক নির্যাতন। যে শিশুটি জন্ম নিয়েছে বর্তমান সমাজে তার একটা পরিচয় দরকার। শিশুটি তার পিতৃপরিচয় ও মেয়েটি স্বামীর অধিকার পেতে দুঃশ্চিন্তায় আছেন। দ্রুত মামলাটি নিষ্পত্তি করে তাদের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া হোক।
থানা পুলিশের সহযোগীতায় ১২দিন পর মেয়েকে উদ্ধার করে তারা বাবা-মা। পরে মেয়ের বাবা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে চন্দন কুমার হিরোর বিরুদ্ধে থানায় মামলা করে।
মামলায় তাকে আটক করে জেল হাজতে পাঠায়। প্রায় তিনমাস কারাভোগ করে হিরো।
আদালতে মামলা চলমান। এদিকে কিশোরী মেয়েটি এক ছেলে সন্তানের জন্ম দেয়। বর্তমানে ছেলের বয়স চার বছর।
ভুক্তভোগীর পরিবার জানায়, হিরো তাদের মেয়েকে প্রলোভন দিয়ে সর্বনাশ করেছে। যে শিশুটির জন্ম হয়েছে তার পিতৃপরিচয় প্রয়োজন। কয়েকদিন পর জন্মনিবন্ধনে বাবার নাম দিতে হবে। তাদের মেয়ের স্বামী এবং শিশুটিকে তার বাবার অধিকার ফিরিয়ে দেয়া হোক।
নওগাঁ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর স্পেশাল অ্যাডভোকেট মকবুল হোসেন বলেন, “দীর্ঘদিন থেকে ওই আদালতে বিচারক না থাকায় মামলা ঝুলে আছে। স্যার যোগদান করলে এবং সাক্ষী হলে মামলাটি দ্রুত শেষ হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। ‘ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের জন্য মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।”