কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার মোচাগড়া গ্রামের অধিবাসী আব্দুল মতিন। দিনমজুর এই ব্যক্তির বাড়িতে বিদ্যুৎ নেই। অথচ বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ না করার অপরাধে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) এর আইনজীবী মোহাম্মদ সানাউল্লাহর রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে গতকাল (১৮ এপ্রিল) সন্ধ্যায় প্রধান বিচারিক হাকিম সোহেল রানা আব্দুল মতিনের জামিন মঞ্জুর করেন।
মতিনের স্ত্রী আমেনা বেগম (৪৫) সাংবাদিকদের বলেন, “চার বছর আগে মোচাগড়া গ্রামে আমাদেরসহ কয়েকটি পরিবার বিদ্যুতের জন্যে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর কাছে আবেদন করেছিলো। সে জন্যে সমিতির সাব-কন্ট্রাক্টর আবুল কালামের কাছে আমরা চার হাজার টাকা জমা দেই। কিন্তু, কালাম আমাদের কাছে ১৫ হাজার টাকা দাবি করেন। তা আমরা দিতে পারিনি।”
আমেনা বেগম জানান, “কালাম এবং আবুল বাশার আমাদের প্রতিবেশী শফিকুল ইসলামের বাসায় বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছেন।”
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সাব-কন্ট্রাকর আবুল কালাম (৫০) বলেন, “দুই বছর আগে আমি মতিনের বাসায় বিদ্যুতের ওয়ারিং করি। তার কাছে যে টাকা চাওয়া হয়েছিলো তিনি তা দিতে অস্বীকার করেন। তারপর, বাসার ওয়ারিং খুলে নেওয়া হয়।”
তিনি আরও বলেন, “আমি জানি না মতিনের নামে যে সংযোগ নেওয়া হয়েছিলো সেটি কোথায় দেওয়া হয়েছে। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তারা এ বিষয়ে বলতে পারবেন।”
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর মতে, ২০১৫ সালের ২২ মার্চ মতিনের বাসার বিদ্যুৎ সংযোগ শফিকুল ইসলামের বাসায় দেওয়া হয়েছে। তারা জানান, মতিনের ছবির বদলে সেই আবেদনে শফিকুলের ছবি বসিয়ে দেওয়া হয়েছে।
গত ১৭ মার্চ সেই সংযোগের বিদ্যুৎ বিল ৪ হাজার ৭ টাকা পরিশোধ না করার কারণে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর এজিএম লক্ষ্মণ চন্দ্র সেন মতিনের নামে স্থানীয় আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। আদালতের নির্দেশে পুলিশ মতিনকে গ্রেপ্তার করে গত ১৬ এপ্রিল। এর পরদিন, তাকে আদালতে প্রেরণ করা হয়।
সমিতির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার হাবিবুর রহমান বলেন, “আবেদনটিতে শফিকুলের ছবি রয়েছে। মতিন যদি আগে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন তাহলে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না।”
যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “আমার ইউনিয়নে সবাই জানেন যে আবুল কালাম এবং আবুল বাশার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে কাজ করেন। তাদের বিরুদ্ধে প্রতারণার অনেক অভিযোগ রয়েছে।”
“দিনমজুর ও চার মেয়ের জনক মতিন একজন নির্দোষ ব্যক্তি। অথচ কালাম ও বাশারের প্রতারণার কারণে মতিনকে জেলে নেওয়া হয়েছে। এমনকী, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তারাও এর সঙ্গে জড়িত,” যোগ করেন আবুল কালাম আজাদ।
মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঞ্জুর আলম বলেন, “আমরা আদালতের পরওয়ানা অনুযায়ী আব্দুল মতিনকে গ্রেপ্তার করেছি। তাকে ১৭ এপ্রিল কারাগারে রাখা হয়।”
এ ঘটনায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটি আবুল কালাম এবং আবুল বাশারের বিরুদ্ধে আনীত প্রতারণার অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান আইনজীবী মোহাম্মদ সানাউল্লাহ।
আপডেট:
ব্যাপক সমালোচনার মুখে আদালতের নির্দেশে ১৮ এপ্রিল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আব্দুল মতিন মিয়াকে মুক্তি দেয়া হয়। এরপর রাত সাড়ে ১০টার দিকে কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১–এর মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মোস্তাফিজুর রহমান তাঁর গ্রামের বাড়িতে যান এবং রাত ১১টায় মতিনের ঘরে বিনা মূল্যে একটি নিজস্ব মিটারের সংযোগ দেন।
মুক্তিলাভের পর আবদুল মতিন মিয়া বলেন, ‘আমার ইজ্জতের যে ক্ষতি হলো, তা কী করে সারাব? ওই মিটার থেকে বিদ্যুৎ ব্যবহার করিনি আমি। আমার ঘরে কোনো মিটার ছিল না। তবু জেলে যেতে হলো। যারা এই কারসাজি করেছে, তাদের বিচার চাই।’