কুমিল্লার চান্দিনা, দেবিদ্বার, চৌদ্দগ্রাম, নাঙ্গলকোটসহ অধিকাংশ উপজেলার গ্রামে গ্রামে ব্যাপক সন্ত্রাস চলছে। এসব এলাকার বহু পরিবার এখন গ্রাম ছাড়া। বহু আ.লীগ নেতা-কর্মী এখন গা-ঢাকা দিয়েছেন। শত শত হিন্দু পরিবার সন্ত্রাসীদের লুটপাটে সর্বস্ব হারিয়ে অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। কয়েকটি এলাকায় ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেলেও সংশ্লিষ্ট পরিবার গুলো এ ব্যাপারে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। জেলার চান্দিনার কচুয়া গ্রামের নিরাশা রানী সরকার ভিক্ষে করে দুটি সন্তান নিয়ে জীবন কাটান। কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচিতে রাস্তায় মাটি কেটে কিছু বাড়তি রোজগার হয়েছিল তার। এ দিয়েই ছোট একটি দোচালা ঘর তৈরি করেছিলেন। স্বপ্নের জিনিসটির ধংসস্তুপের দিকে তাকিয়ে তিনি এখন শুধু চোখের জল ফেলেন। খাওয়া নেই গত তিনদিন। কারন ভিক্ষের সম্বল পাঁচ কেজি চালও লুট হয়ে গেছে। জাতীয় রাজনীতির নোংরামি সম্পর্কে কিছুই না জানা এ নারীটিকে হতে হলো রাজনীতির শিকার। নিরাশা রানীর মতো অবস্থা চান্দিনার কচুয়া গ্রামের ৬০টি হিন্দু পরিবারেরই। পরনের একটি ছিন্ন বস্ত্র ছাড়া এদের ব্যবহারের কিছু রেখে যায়নি হামলাকারীরা। চাল-ডাল, কাঁথা-বালিশ, হাড়ি-পাতিল থেকে গরু-ছাগল সবই নিয়ে গেছে। হুমকি দিয়ে গেছে এসব কথা কাউকে বললে সবাইকে একসঙ্গে শ্মশানে শোয়াবে। নির্বাচনের পরদিন হিন্দু এ গ্রামটিতে আক্রমণের ঘটনার পর এ যাবৎ কেউ গ্রামটির খোঁজ নেয়নি। গতকাল শনিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে গ্রামটিতে শ্মশানের নীরবতা নেমে এসেছে।
প্রথম আলো ,৭ অক্টোবর, ২০০১