সাম্প্রতিক হামলার তথ্য তুলে ধরে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ বলছে, গত ১৩ অক্টোবর থেকে ১ নভেম্বর পর্যন্ত দেশের ২৭টি জেলায় সাম্প্রদায়িক হামলা হয়েছে। এ সময় ১১৭ মন্দির-পূজামণ্ডপ ভাঙচুর হয়েছে, ৩০১টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বসতবাড়ি হামলা-লুটপাটের শিকার হয়েছে এবং এ সময়ে ৯ জন নিহত হয়েছেন।
আজ শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত এই তথ্য তুলে ধরেন।
সংবাদ সম্মেলনে পরিষদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের বিবৃতিতে তারা ‘ভীষণভাবে ক্ষুব্ধ ও ব্যথিত’। এই বিবৃতির প্রতিবাদে ১২ নভেম্বর শুক্রবার সারা দেশে তারা ‘ধিক্কার মিছিল’ করবে।
সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিবৃতিতে বলেছেন, সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় যে দুজন হিন্দু মারা গেছেন, তাঁদের একজনের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে এবং অন্যজন পানিতে ডুবে মারা গেছেন। কেউ ধর্ষণের শিকার হননি।
রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য এক নয়। এখান থেকেই আমরা মনে করি, সরকারের অভ্যন্তরে দুটি ধারণা কাজ করছে। একটি হচ্ছে সাম্প্রদায়িক হামলাকে লঘু করে দেখানো এবং তুচ্ছতাচ্ছিল্যের সঙ্গে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ব্যবহার করা। অন্যটি ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য। যেখানে তিনি বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার কথা স্বীকার করেছেন।
তিনি অপশক্তিকেই দায়ী করেছেন।’ রানা দাশগুপ্ত বলেন, গত ১৫ অক্টোবর চৌমুহনীতে ইসকন মন্দিরের ভক্ত যতন সাহা মন্দির রক্ষা করতে গিয়ে সন্ত্রাসীদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মৃত্যুবরণ করেন। একই দিন ইসকন মন্দিরের সন্ন্যাসী প্রান্ত দাসকে কুপিয়ে পুকুরে ফেলে দেয় সন্ত্রাসীরা। পরদিন তাঁর মরদেহ পুকুরে ভেসে ওঠে। তাঁর মাথা ও শরীরে কোপের দাগ ছিল।
রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘আইনমন্ত্রীর ইউটার্ন আমাদের হতবাক ও বিস্মিত করেছে। সম্প্রতি এক সেমিনারে আইনমন্ত্রী বলেছিলেন, সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন ও জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে তা সংসদে উত্থাপন করা হবে। এর চার দিন পর আইনমন্ত্রী বলেন, সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন নয়, সাক্ষী সুরক্ষা আইনের কথা বলেছেন। আর প্রধানমন্ত্রী বিবেচনা করলে সংখ্যালঘু কমিশন গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। বিষয়টিকে দ্বিচারিতা।’
ইসকন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক চারু চন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী বলেন, ‘পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য আমাদের হতাশ করেছে। সাম্প্রদায়িক হামলার বিচার পাওয়া নিয়ে আমাদের আশার আলোতে জল ঢেলে দিয়েছেন তিনি।’ হামলার বিচার না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ঊষাতন তালুকদার। তিনি বলেন, বাংলাদেশ বহু জাতি ও বহু ভাষার দেশ, এটা মেনে নিতে হবে। সাম্প্রদায়িক সব মামলার বিচার করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় সরকারের দ্বিচারিতা দেখছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
সংগঠনটির আরেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নিম চন্দ্র ভৌমিক বলেন, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে সাম্প্রদায়িক হামলার বিচার করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন, পার্বত্য শান্তিচুক্তি ও পার্বত্য ভূমি কমিশনের বাস্তবায়ন এবং সমতলে আদিবাসীদের জন্য ভূমি কমিশন গঠনের দাবি জানানো হয়।