গাছ চুরি মামলার আসামি গ্রেপ্তার করতে গিয়ে নওগাঁ জেলার মহাদেবপুর থানার ওসি ও সেকেন্ড অফিসারের নেতৃত্বে পুলিশ উপজেলার শ্রীনগর গ্রামে অনিল মণ্ডল নামে এক সেবায়েতের বাড়িঘর ভাঙচুর করেছে। পুলিশ এ সময় তার এক বছর বয়সী শিশুকন্যাসহ স্ত্রী ও পুত্রের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালায় বলে অভিযোগ উঠেছে। আহত সেবায়েত পত্নী ডলি রানীকে তার শিশুকন্যাসহ মান্দা উপজেলা কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে শ্রীনগর গ্রাম ঘুরে বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টির সত্যতা সম্পর্কে প্রমাণ পাওয়া গেছে। ̄স্থানীয় এক বালক জানায়, গত শুক্রবার রাতে অনিল মণ্ডলের বাড়িতে পুলিশ হানা দেয় এবং তাকে খোঁজার নামে তার বাড়িতে তাণ্ডব চালায়। অনিল মণ্ডলের বাড়ি ঘুরে দেখা গেছে, তার ঘরের কোনো দরজা নেই। ঘরের চালে লাগানো নতুন টিন দুমড়ে মুচড়ে একাকার। এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে স্থানীয় সুশীল চন্দ্র দাশ, জগবন্ধু দাস, উপেন্দ্রনাথ মণ্ডল, আফাজউদ্দিন ও সাজেদা বিবি জানান, পুলিশ অনিলের বাড়িতে হানা দিলে ডাকাত ভেবে সে ঘরের চালে উঠে পড়ে। পুলিশ তাকে ধরতে গোয়াল ঘরের বাঁশ দিয়ে ঘরের চালায় আঘাত করে এবং একাধারে সেটি পেটাতে থাকে। এতেও কাজ না হলে পুলিশ তার ঘরের দরজায় লাথি মেরে ভেঙে ফেলে এবং ভেতর থেকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে টিনের চাল ফুটো করে দেয়। এ সময় অনিলের স্ত্রী তার সবামীকে না মারার জন্য পুলিশের প্রতি অনুনয় বিনয় করলে পুলিশ তাকে অকত্থ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং লাঠিপেটা করে বলে আহত ডলি রানী জানান। পুলিশ এ সময় তার এক বছর বয়সী কন্যাকে মাটিতে আছাড় দিয়ে ফেলে দেয় এবং ছেলে শিপলুর বুকে পা দিয়ে মাড়ায়। অনিলের পিতা উপেন্দ্রনাথ মণ্ডল এর প্রতিবাদ জানালে পুলিশ তাকেও লাঠিপেটা করে। ডলি রানীকে বেধড়ক মারধরের সময় পুলিশ তার গোপনাঙ্গেও লাঠি দিয়ে আঘাত করে বলে তিনি অভিযোগ করেন। পুলিশের পিটুনিতে তার একটি পা ভেঙে গেছে বলে চিকিৎসকরা আশঙ্কা করছেন। গ্রামবাসী জানায়, গভীর রাতে পুলিশের এ গ্রেপ্তার অভিযান ছিল অনেকটা চোরাগোপ্তা। এ সময় পুলিশের সঙ্গে স্থানীয় কোনো চেয়ারম্যান, মেম্বার বা গ্রামপুলিশ ছিল না। অনিলের আর্তচিৎকারে গ্রামবাসী পুলিশকে ঘেরাও করলে তারা এক রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে। পরে পরিস্থিতি বেগতিক দেখে গ্রামপুলিশকে ডাকা হয়। অবশ্য পুলিশ এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে জানায়, গ্রামপুলিশ মকবুল হোসনেকে তারা অভিযানের শুরু থেকেই সঙ্গে নেয়। পুলিশ গুলিবর্ষণের কথাও অসবীকার করেছে। এ ব্যাপারে মহাদেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মঞ্জিল হোসেনের সঙ্গে কথা বললে তিনি বিষয়টি সম্পূর্ণ অসবীকার করে বলেন, ওয়ারেন্টের আসামি অনিলকে গ্রেপ্তার করতে গেলে সে পুলিশকে ডাকাত সাজিয়ে ধোঁকা দেওয়ার জন্য সিনক্রিয়েট করে। অনিল নিজেই নিজের বাড়িঘর ভাঙচুর করে পুলিশের ওপর দোষ চাপায় বলে তিনি জানান। উল্লেখ্য, থানার বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষ কর্তৃক দায়ের করা গাছ চুরির একটি গণমামলায় অনিলসহ ওই গ্রামের বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আদালত থেকে গত ১৪ মে ওয়ারেন্ট জারি করা হয়। অথচ গাছ চুরির এই মামলার বিষয়ে শ্রীনগরবাসী কোনো কিছুই জানে না বলে জানিয়েছে।

প্রথম আলো, ২২ মে ২০০২

মন্তব্য করুন