পায়রা বন্দর করতে গিয়ে জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ছয়আনিপাড়ার একটি রাখাইন পল্লীতে বাড়িঘরসহ বিদ্যমান অবকাঠামোর বিপরীতে ক্ষতিপূরণ ও যথাযথ পুনর্বাসনের জন্য দাবি জানানো হলেও সেটির সুরাহা করা হচ্ছে না। প্রতিদিন একটু একটু করে গ্রামের বিভিল্পু জায়গা ভাঙ্গা হচ্ছে। গত ১০ জুন রাতের আঁধারে রাখাইন পাড়ার প্রবেশপথ কেটে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়।

 

প্রথা অনুযায়ী প্রতি রাখাইন গ্রামে দুটি শ্মশানভূমি থাকে। যারমধ্যে শতবছরের পুরনো একটি শ্মশানটি বন্দর কর্তৃপক্ষ কোন রকম অনুমতি ও আলোচনা ছাড়াই ইতোমধ্যে বালু দিয়ে ভরাট করে ফেলেছে। অন্যটির ভূমির উপর রাস্তা বানানো হচ্ছে। বালু ফেলে নষ্ট করে দেয়া হয়েছে তাদের সংরক্ষিত সুপেয় পানির পুকুর। এতে পাড়ার রাখাইনদের মধ্যে বিরাজ করছে ক্ষোভ, অসন্তোষ আর উচ্ছেদ আতঙ্ক। আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন তাদের অস্তিত্ব ভয়াবহ সঙ্কটে রয়েছে।

৮ জুলাই বৃহস্পতিবার পায়রা বন্দর প্রকল্পের কারণে উচ্ছেদ হুমকির সম্মুখীন রাখাইন পরিবারকে রক্ষার জন্য এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনের মূল নিবন্ধে এ কথাগুলো উঠে আসে। নাগরিক সমাজের ব্যানারে এ সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখা নাগরিক প্রতিনিধিদের স্বরেও পাওয়া যায় এসব কথারই প্রতিধ্বনি।

এতে নিবন্ধটি পড়েন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস। নিবন্ধে আরও বলা হয়, ছয়টি রাখাইন পরিবারকে কোনো ধরনের ক্ষতিপহৃরণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে তাদের ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদের পাঁয়তারা চলছে। পায়রা তৃতীয় সমুদ্রবন্দরের জন্য জমি অধিগ্রহণের আওতায় পড়ায় প্রায় ৩০০ বছরের প্রাচীন ক্ষুদ্র জাতিসত্তার রাখাইন পল্লী নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে।

নাগরিক প্রতিনিধিদের বক্তব্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল বলেন, ‘ক্ষমতাসীন দল দাবি করে, তারা মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি। তাদের দল মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিল বলেই শুধু তারা এ অবস্থান দাবি করতে পারে না। সপক্ষের শক্তি হতে গেলে মুক্তিযুদ্ধের শর্তগুলো মানতে হবে। এর মধ্যে আছে জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সব মানুষের অধিকারের প্রতি সম্মান, সহাবস্থান নিশ্চিত করা। এসব শর্ত মানলেই শুধু সপক্ষের শক্তি হিসেবে দাবি করা সংগত হবে। আর তা মানলে আমরাও সরকারকে তার কাজে সহযোগিতা করব। ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষের অধিকারকে মূল্যহীন করে দেওয়া হচ্ছে। তাদের অধিকারের প্রতি অসম্মান করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত।’

তিনি কলাপাড়ার ছয়আনিপাড়ার রাখাইনদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।

এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা বক্তব্যে দেশের জমি অধিগ্রহণ আইনটি ব্রিটিশ আমলের কলোনিয়াল আইন থেকেও বাজে বলে মন্তব্য করেন।

অনুষ্ঠানের সঞ্চালক বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, ‘স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরও দেশের একজন নাগরিককে তাঁর শ্মশান রক্ষা ও ভূমি ফিরে পাওয়ার জন্য আকুতি জানাতে হয়।’ সরকার নাগরিকদের এই ব্যকুলতা অনুভব করতে পারবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন জনউদ্যোগের সভাপতি ডা. মোস্তাক হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জোবাইদা নাসরিন, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল, অধিকারকর্মী মেইনথেইন প্রমীলা, পটুয়াখালীর স্থানীয় রাখাইন জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধি চিং ধা মং প্রমুখ।

সমকাল

মন্তব্য করুন