মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের সীমান্তবর্তী ইসলামপুর ইউপির কুরমা পুঞ্জির পানজুমে প্রবেশ করে ফরমি সুচিয়াং (২৮) নামে এক খাসিয়া যুবককে ধরে ঘটনাস্থলে প্রথম দফা মারধর ও পরে আবার তার হাত-পা বেঁধে কুরমা বনবিটে একটি অন্ধকার কক্ষে আটকিয়ে রেখে অমানুসিক নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে রাজকান্দি বনরেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ বনবিটে কয়েকজনের বিরুদ্ধে।

 

নির্যাতিত ফরমি সুচিয়াং ফরেষ্ট ভিলেজার ও একই পুঞ্জির রিয়াং খংলার ছেলে। ২০ এপ্রিল মঙ্গলবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনার খবর পেয়ে ওইদিন সন্ধ্যায় পুঞ্জির সহকারী হেডম্যান একটি মুচলেকায় স্বাক্ষর দিয়ে আহত যুবকে ছাড়িয়ে নিয়ে কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। বর্তমানে তিনি চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

নির্যাতিত খাসিয়া যুবক ফরমি সুচিয়াং ২১ এপ্রিল বুধবার দুপুরে বলেন, ‘গত মঙ্গলবার বিকালে রাজকান্দি বনরেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে কুরমা বনবিটের নবনিযুক্ত বিট কর্মকর্তা রাজ্জাক আহমেদসহ বনকর্মীরা পান জুমের ভেতর প্রবেশ করেন। করোনাকালে পানজুম এলাকায় কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না বলে এ সময় তিনি তাদেরকে প্রবেশের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এতে বনগার্ড জহির মিয়া, বনপ্রহরী ফুরকান মিয়া ও নতুন বনবিট কর্মকর্তা রাজ্জাক আহমেদসহ ৪/৫ জন মিলে তাকে ধরে লাঠি দিয়ে পেটান। পরে আবার হা-পা বেঁধে নিয়ে কুরমা বনবিটের একটি অন্ধকার কক্ষে আটকিয়ে রেখে তাকে অমানসিক নির্যাতন করে।’

হাত-পা বেঁধে নিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি দেখে দুটি শিশু কুরমা পুঞ্জিতে খবর দিলে নির্যাতিতের মামা ডালিম সুচিয়াং ও পুঞ্জির সহকারী হেডম্যান ছার্লেস সুঙ গিয়ে সন্ধ্যায় কুরমা বনবিট থেকে একটি মুচলেকায় স্বাক্ষর দিয়ে আহত ফরমি সুচিয়াংকে ছাড়িয়ে নিয়ে অবস্থা খারাপ দেখে বুধবার সকালে কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান।

কুরমা পুঞ্জির সহকারী হেডম্যান ছার্লেস সুঙ মুঠোফোনে বলেন, ‘তারা বনের জমিতে ফরেস্ট ভিলেজার হিসেবে বসবাস করে পান চাষ করেন। তাদের পুঞ্জির যুবক যদি কোন অপরাধ করে থাকে তাহলে তার বিচার করা যেত। এভাবে বনে প্রথম দফা মারধর করে আবার বনবিটে নিয়ে একটি কক্ষে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন করা উচিত হয়নি।’

ইসলামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এভাবে কাউকে মারধর করা ঠিক হয়নি।

অভিযোগ বিষয়ে রাজকান্দি বনরেঞ্জ কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, যুবকটি বনের গাছ-গাছালি ছাঁটাই করছিল। এ জন্য তাকে শাসন করা হয়েছে। তবে মুচলেকা সম্পর্কে তিনি কিছুই বলেননি।

তবে খাসিয়া হেডম্যানদের সংগঠন খাসি সোশাল কাউন্সিলের সভাপতি জিডিসন প্রধান সুচিয়াং বলেন, ‘এভাবে কাউকে হাত-পা বেঁধে মারধর করা ঠিক হয়নি। তিনি এ ঘটনার জন্য তীব্র নিন্দা জানিয়ে তদন্ত পূর্বক সুষ্ঠু বিচারও দাবি করেন।’

দেশ রূপান্তর

মন্তব্য করুন