থানা হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগে নেত্রকোনার কেন্দুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামানের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
১১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার মামলার বিষয়টি জানাজানি হয়। গত বুধবার (৯ অক্টোবর) সকালে গোলাম মোস্তফা (৩৫) নামের এক যুবক কেন্দুয়া থানায় মামলাটি করেন। এর আগে বাদী কেন্দুয়া আমলি আদালতের কাছে আবেদন জানালে আদালত মামলা করতে নির্দেশ দেন।
গোলাম মোস্তফা কেন্দুয়ার চিরাং ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ছিলিমপুর গ্রামের বাসিন্দা।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, ওসি মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামানের বিভিন্ন দুর্নীতি ও অপকর্মের কথা উল্লেখ করে গোলাম মোস্তফা গত ২৫ ফেব্রুয়ারি পুলিশের আইজিপি বরাবর আবেদন করেন। এরপর ওসি রাশেদুজ্জামান ক্ষিপ্ত হয়ে গোলাম মোস্তফাকে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি দেখিয়ে অভিযোগ প্রত্যাহারের চাপ প্রয়োগ করেন। ২৪ মার্চ কেন্দুয়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মো. মোফাজ্জল হোসেন ভূঁইয়া ওসির বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে হয়রানি ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে ময়মনসিংহ রেঞ্জের ডিআইজির কাছে লিখিত আবেদন জানান। অভিযোগটি তদন্তকালে ১০ এপ্রিল গোলাম মোস্তফা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এসে মৌখিক ও লিখিত জবানবন্দি দেন। এতে ওসি আরও ক্ষিপ্ত হন। ৪ জুন রাতে ওসির উপস্থিতিতে পুলিশ উপজেলার ছিলিমপুর গ্রামে একটি বাড়ি থেকে গোলাম মোস্তফা, কেন্দুয়া পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুল কাইয়ুম ভূঁইয়া, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আনিছুর রহমান, কান্দিউড়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আবু হারেসসহ আটজনকে জুয়া খেলার অভিযোগে আটক করেন।
গোলাম মোস্তফার দাবি, ওই সময় তাঁরা ছিলিমপুর গ্রামের আসাদুল হকের বাড়িতে বসে একটি সামাজিক সালিস করছিলেন। পরে সালিসস্থলে কিছু তাস ছিটিয়ে ছবি তুলে, ওসি তা জুয়া খেলা বলে আটজনকে থানায় নিয়ে যান। রাতে তাঁকে (গোলাম মোস্তফাকে) থানার একটি কক্ষে নিয়ে লম্বা টেবিলে শুইয়ে রেখে দুই হাত ও দুই পা বেঁধে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ, বেধড়ক মারধর এবং পায়ুপথ ও গোপনাঙ্গে মরিচের গুঁড়া ঢেলে নির্যাতন করেন ওসি মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামান। মোস্তফা আরও দাবি করেন, তাঁর দুই পায়ের আঙুলের মাথায় সুচ দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে রক্তাক্ত করা হয়েছে। এতে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে কেন্দুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসা করান। কিছুটা সুস্থ হলে থানায় এনে পরদিন সবাইকে জুয়া আইনে মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়। ওই দিন আদালত থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে তিনি নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়ে টানা পাঁচ দিন চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হন।
ঘটনার দীর্ঘদিন পর মামলার বিষয়ে গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘আমাকে নির্যাতনের পর ৮ জুন ও ২১ জুন আমার স্ত্রী রত্না আক্তার এ ব্যাপারে ডিআইজি ও আইজিপি বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছিলেন। আর করোনাভাইরাসের কারণে আদালতে নিয়মিত বিচার কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ওই সময় মামলা করা সম্ভব হয়নি। বিষয়টি আদালতকে জানানো হয়েছে, এজাহারেও তা উল্লেখ আছে।’
ওসি মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামান খানের মুঠোফোনে বৃহস্পতিবার রাত থেকে আজ শুক্রবার সকালে বেশ কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। বেশ কয়েকবার ফোন কেটেও দিয়েছেন। তবে জেলা পুলিশ সুপার মো. আকবর আলী বলেন, এ রকম একটি মামলা হয়েছে। মামলাটি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (খালিয়াজুরি সার্কেল) এবং কেন্দুয়া সার্কেলের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা মো. জামাল উদ্দিন তদন্ত করছেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. জামাল উদ্দিন আজ দুপুরে বলেন, তদন্ত শুরু হয়েছে। নিরপেক্ষভাবে বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। কবে নাগাদ তদন্তকাজ শেষ হতে পারে—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি সময়সাপেক্ষ। এখনই তা বলা যাচ্ছে না। বৃহস্পতিবার মামলার কপি হাতে এসে পৌঁছেছে। এরপর তদন্ত শুরু হয়েছে।