গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কামদিয়া বাজারের এক হিন্দু কাপড় ব্যবসায়ীর দোকানে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আগুন লাগানোর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ওই দোকানের পাশের মুসলিম মালিকের দোকানও পুড়েছে।

আজ মঙ্গলবার সকালে রমেশ চন্দ্র দাসের (৩৫) দোকানে আগুন লাগানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। এ ঘটনায় আগুন ছড়িয়ে পুড়ে গেছে মো. বিপ্লব আকন্দের (৩৪) দোকানও।

এ ঘটনায় তাদের প্রায় ৫৪ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানান রমেশ এবং বিপ্লব।

রমেশ চন্দ্র দ্য ডেইলি স্টারকে অভিযোগ করে বলেন, ‘আমি কামদিয়া ইউনিয়নের পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক। বিপদে-আপদে আমি হিন্দু ভাইদের পাশে দাঁড়াই। এতে করে আমার বিরুদ্ধে অনেকের ক্ষোভ থাকতে পারে। দেশের চলমান ইস্যুতে কেউ ক্ষুব্ধ হয়ে আমার দোকানে পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগিয়ে থাকতে পারে।’

তবে ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, যেহেতু আগুন কীভাবে লেগেছে তা কেউ দেখেনি, তাই তদন্ত ছাড়া আগুন লাগার কারণ বলা যাচ্ছে না।

রমেশ বলেন, ‘আমার এই দোকান (রবিন বস্ত্রালয় এবং গার্মেন্টস) ছাড়া আর কিছু নেই। দোকানটা পুড়িয়ে দিলো কেউ। আমার দোকানে প্রায় ৫০ লাখ টাকার কাপড় ছিল। দোকানে নগদ আড়াই লাখ টাকা রাতে রেখে গিয়েছিলাম। সব কিছু ১ ঘণ্টার মধ্যে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। কিছুই নেই আর। আমি সর্বস্বান্ত হয়ে গেলাম।’

রমেশের দোকান থেকে পাশের মো. বিপ্লব আকন্দের কাপড়ের দোকানেও আগুন ছড়িয়ে পড়ে।

কীভাবে আগুন লেগেছে জানতে চাইলে রমেশ বলেন, ‘গতকাল রাত ৯টার পরে দোকান বন্ধ করে বাড়িতে যাই। আজ ভোর ৫টার সময় বাজার থেকে আমাকে ফোন করে একজন জানান, দোকানে আগুন লেগেছে। এসে দেখি আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে। আমি যাওয়ার আগেই স্থানীয়রা ফায়ার সার্ভিসে ফোন করে। কিন্তু ফায়ার সার্ভিস যতক্ষণে পৌঁছায় তার আগেই স্থানীয়দের সহযোগিতায় আগুন নেভানো হয়। কিন্তু, আগুন নেভার আগেই সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘দোকানের শাটারের নিচে একটু ফাঁকা জায়গা আছে তালা লাগানোর জন্য। আমার মনে হচ্ছে ওই দিক দিয়েছেই কেউ আগুন লাগিয়েছে।’

মো. বিপ্লব আকন্দ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ভোর ৫টায় আমিও খবর পেয়ে এসে দেখি রমেশ দা’র দোকানে আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে। আমার দোকান থেকে সব মাল বের করা হলেও আগুনে আমার কিছু অবকাঠামো পুড়ে গেছে এবং ফায়ার সার্ভিসের পানিতে আমার অনেক কাপড় নষ্ট হয়ে গেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘রমেশ দা আর আমি দুই ভাইয়ের মতোই এখানে কাপড়ের ব্যবসা করতাম। কিন্তু কীভাবে কী হয়ে গেল বুঝতে পারছি না। আমার প্রায় আড়াই লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।’

আগুনের খবর পেয়ে ঘোড়াঘাট উপজেলার ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে এসে আগুন নিভিয়ে ফেলে।

যোগাযোগ করা হলে ঘোড়াঘাট ফায়ার সার্ভিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিরঞ্জন সরকার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছাই সকাল সাড়ে ৬টায়। ৩০ মিনিটের মধ্যে আগুন নিভিয়ে ডাম্পিং করা হয়েছে।’

আগুন লাগার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রাথমিক কোনো কারণ আমরা পাইনি। তদন্ত শেষে বলতে পারব।’

ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে গাইবান্ধা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘দোকানের ভেতরের বৈদ্যুতিক মিটার দুটি ঠিক আছে। তবে কী কারণে আগুন লেগেছে তা কেবল বিশেষজ্ঞ দলই বলতে পারবে।’

গোবিন্দগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা একেএম মেহেদী হাসানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিস, সিআইডি, পল্লী বিদ্যুৎ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জানিয়েছে, দোকানের ভেতর থেকে সর্ট সার্কিট বা এই ধরনের কোনো কারণে আগুন লাগতে পারে। তবে দোকান মালিক অভিযোগ করেছেন, কেউ তার দোকানে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। লিখিত কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।’

দ্য ডেইলি স্টার

মন্তব্য করুন