গাজীপুর মেট্রোপলিটন ডিবি পুলিশের নির্যাতনে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে পুলিশ বলছে গ্রেফতারের পর অসুস্থজনিত কারণে ঐ নারী মারা গেছেন। মৃত ইয়াসমিন বেগম (৪০) ভাওয়াল গাজীপুর গ্রামের আব্দুল হাইয়ের স্ত্রী।

 

মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যার পর নগরীর গজারিয়া পাড়া এলাকা থেকে মাদক ব্যবসার অভিযোগে ডিবি পুলিশ ইয়াসমিনকে নিজ বাড়ি থেকে তুলে আনার পর রাতে হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। তবে নিহতের স্বজনদের দাবি তাকে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে। মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে।

নিহতের ছেলে ইয়াসিন আরাফাত জিসান জানান, তার বাবা আব্দুল হাইকে মাদক মামলায় গ্রেফতার করতে রাত ৮টার দিকে মহানগর ডিবি পুলিশের এএসআই নুরে আলমের নেতৃত্বে সাত/আট জন পুলিশ তাদের বাড়িতে যায়। এ সময় পুলিশ সদস্যরা তার বাবা আব্দুল হাইকে না পেয়ে বাসার কলাপসিবল গেট ভেঙে ঘরে প্রবেশ করে। এসময় ডিবির সদস্যরা তার মা ইয়াসমিনকে মারধর করে আটক করে নিয়ে যায়। পরে মায়ের মোবাইলে ফোন দিলে ডিবির সদস্যরা তাকে ডিবি অফিসে যেতে বলে। কিছুক্ষণ পর পুলিশ আবার ডিবি অফিসে না গিয়ে শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যেতে বলে। সেখানে গেলে পুলিশ জানায়, জিসানের মা মারা গেছেন। তবে তার মা হৃদরোগী ছিলেন।

মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার মনজুর রহমান নির্যাতনে হত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ইয়াসমিনকে ১০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ গ্রেফতার করা হয়। পরে গোয়েন্দা অফিসে নিলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানোর প্রস্তুতিকালে ইয়াসমিন মারা যান। ইয়াসমিন ও তার স্বামী আব্দুল হাইয়ের বিরুদ্ধে মাদক আইনে একাধিক মামলা রয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।

শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ১০টা ১০মিনিটের দিকে ইয়াসমিনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এসময় তার বুকে ব্যথা ও প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট ছিল। পরে তার ইসিজিও করা হয়। লক্ষণ থেকে প্রাথমিকভাবে বুঝা গেছে তিনি স্ট্রোক করেছেন। পরে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে রাত ১১টা ২০ মিনিটের দিকে তিনি মারা যান। হার্ট অ্যাটাকে তিনি মারা গেছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়েছে। নিহতের শরীরে বাহ্যিকভাবে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।

তদন্ত কমিটি: এদিকে পুলিশের নির্যাতনে গৃহবধূ মৃত্যুর অভিযোগের বিষয়টি তদন্তের জন্য গাজীপুর মেট্রোপলিটন কমিশনার মো. আনোয়ার হোসেন তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। এ কমিটির প্রধান হলেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আজাদ মিয়া। আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।

ইত্তেফাক

মন্তব্য করুন