জন্ম থেকেই তাঁর একটি পা খাটো। ঠিকমতো হাটতে পারেন না। অথচ ওই প্রতিবন্ধী ব্যক্তির বিরুদ্ধেই বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বার্থী ইউনিয়নের ধুরিয়াইল শ্রী শ্রী কাজীরপাড় সর্বজনীন মন্দিরে হামলার অভিযোগে মামলা হয়েছে। মামলার এজাহারে ওই প্রতিবন্ধী ব্যক্তি প্রতিমা ভাঙচুর করে দৌড়ে পালিয়ে গেছেন—এ কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন স্থানীয় লোকজন। তাঁরা ওই মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান।
প্রতিবন্ধী ওই ব্যক্তির নাম রফিকুল ইসলাম ওরফে শাহীন (৫৬)। তাঁর বাড়ি গৌরনদী উপজেলার বার্থী ইউনিয়নের ধুরিয়াইল গ্রামে। তিনি উপজেলা বিএনপির সদস্য। বিএনপি নেতা হওয়ায় বার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুর রাজ্জাক মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদককে দিয়ে মামলা করিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে আওয়ামী লীগের ওই নেতা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, শারদীয় দুর্গাপূজার দশমীর দিন রাত আটটায় ধুরিয়াইল শ্রী শ্রী কাজীরপাড় সর্বজনীন দুর্গামন্দিরে ৫০ থেকে ৬০ জন সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে প্রতিমা ভাঙচুর করে। এ ঘটনায় পরদিন মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুভাষ বৈদ্য বাদী হয়ে যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য মো. রফিকুল ইসলাম ওরফে কাজল, বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম, আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আহসান জামিল, যুবদল কর্মী সোহেল সিকদার, সবুজ ঢালীসহ ৮২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
মামলায় হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি জন্মগতভাবে একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী। আমার বাঁ পা খাটো। আমি ঠিকমতো হাটতে পারি না। অথচ আমার বিরুদ্ধে ৫০ থেকে ৬০ জন সন্ত্রাসী নিয়ে মন্দিরে হামলা, ভাঙচুর ও ৩ লাখ টাকার মালামাল লুট করার অভিযোগে মামলা হয়েছে। এমনকি মামলার এজাহারে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে আমি দৌড়ে পালিয়েছি—এ কথা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে হয়রানি করতে আমাকে ওই মামলার আসামি করা হয়েছে।’
ধুরিয়াইল গ্রামের হারুন আর রশিদ (৬৫) বলেন, ‘জন্মের পর থেকে দেখেছি রফিকুল ঠিকমতো হাটতে পারে না। সে মন্দিরে হামলা চালিয়ে কীভাবে দৌড়ে পালাল, তা বুঝতি পারছি না।’ স্থানীয় এইচ এম সরোয়ার হোসেন বলেন, একজন প্রতিবন্ধী মানুষ যার হাটাচলা করতেই কষ্ট হয়, তাঁর দ্বারা মন্দিরে হামলা করা সম্ভব নয়।
গৌরনদী উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ঐক্যফ্রন্টের সভাপতি দুলু রায় ও সাধারণ সম্পাদক মানিক মুখার্জী বলেন, একজন প্রতিবন্ধীকে মন্দিরে হামলার অভিযোগে করা মামলায় জড়ানো অমানবিক এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষকে বিতর্কিত করার শামিল। তাঁকে মানবকি কারণে ওই মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া উচিত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার বাদী সুভাষ বৈদ্য বলেন, ‘হামলার সময় আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। আমি মামলার আসামিদের সম্পর্কে কিছুই জানি না বা তাঁদের চিনি না। বার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বার্থী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাক হাওলাদার আমাকে ধরে থানায় নিয়ে জোর করে কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে মামলা করেছেন।’ তবে মন্দির কমিটির নেতাকে দিয়ে মামলা করানোর অভিযোগ অস্বীকার করে আবদুর রাজ্জাক হাওলাদার বলেন, বাদী সুভাষ বৈদ্য স্বেচ্ছায় ও স্বপ্রণোদিত হয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।
এ বিষয়ে গৌরনদী মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল হক বলেন, অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্তে প্রতিবন্ধীকে নির্দোষ পাওয়া গেলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।