ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার ছয়টি দাখিল মাদ্রাসায় জালিয়াতির মাধ্যমে সহকারী গ্রন্থাগারিক/ক্যাটালগার, নিরাপত্তা কর্মী ও আয়া নিয়োগ দিয়ে এমপিওভুক্তির আবেদন করায় প্রতিষ্ঠানগুলোর এমপিও স্থগিত করাসহ ম্যানেজিং কমিটি ভেঙে দেওয়ার সুপারিশ এবং সভাপতি ও সুপারের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে মামলা দায়ের কেন করা হবে না- তার ব্যাখ্যাসহ কারণ জানতে চেয়েছে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতর। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বৃহম্পতিবার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরের সহকারী পরিচালক জান্নাতুন নাহার সোমবার স্বাক্ষরিত অধিদফতরের অফিস আদেশে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার উত্তর চরমানিকা লতিফিয়া দাখিল মাদ্রাসা, আমিনাবাদ হাকিমিয়া দাখিল মাদ্রাসা, দক্ষিণ আছলামপুর মোবারক আলী দাখিল মাদ্রাসা, আছলামপুর মোহাম্মদিয়া দাখিল মাদ্রাসা, সুপার ও সভাপতিকে আগামী ৫ আগস্টের মধ্যে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা অধিদফতরে দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছেন।
এর আগে ১৯ জুলাই স্বাক্ষরিত অধিদফতরের অফিস আদেশে চরফ্যাশন উপজেলার আসলামিয়া হামেলা খাতুন বালিকা দাখিল মাদ্রাসা, দক্ষিণ ফ্যাশন সামসুল উলুম দাখিল মাদ্রাসার সুপার ও সভাপতিকে বৃহস্পতিবারের মধ্যে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা অধিদফতরে দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আলাদা আলাদা আদেশে জানা গেছে, ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলার আসলামিয়া হামেলা খাতুন বালিকা দাখিল মাদ্রাসায় জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে মহাপরিচালকের প্রতিনিধি মনোনয়ন করে সহকারী গ্রন্থাগারিক/ক্যাটালগার ও নিরাপত্তা কর্মী পদে অবৈধভাবে নিয়োগ এবং বেআইনিভাবে চলতি জুলাই মাসে তাদের এমপিওভুক্তির অনলাইন আবেদন সাবমিট করা হয়।
করোনার ছুটিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সময় ২০২০ সালের ২৬ আগস্ট ৫ সদস্যবিশিষ্ট নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ডে গ্রন্থাগারিক ও নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ করা হয়। ওই নির্বাচনী বোর্ডে ডিজির প্রতিনিধি হিসেবে দেখানো হয় ঢাকার সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়ার আরবি বিভাগের প্রভাষক মো. রেজাউল করিমকে। অথচ মহাপরিচালকের মনোনীত প্রতিনিধি হিসেবে তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়নি। তিনি নিয়োগ কার্যক্রমে অংশ নেননি এবং তাকে নিয়োগ কার্যক্রমে আহবান করা হয়নি।
চরফ্যাশন উপজেলার দক্ষিণ ফ্যাশন সামসুল উলুম দাখিল মাদ্রাসা জাল- জালিয়াতির মাধ্যমে মহাপরিচালকের প্রতিনিধি মনোনয়ন করে সহকারী গ্রন্থাগারিক/ক্যাটালগার, নিরাপত্তা কর্মী ও আয়া পদে অবৈধভাবে নিয়োগ এবং বেআইনিভাবে চলতি জুলাই মাসে তাদের এমপিওভুক্তির অনলাইন আবেদন সাবমিট করা হয়।
করোনার ছুটিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সময় ২০২০ সালের ২১ আগস্ট ৫ সদস্যবিশিষ্ট নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ডে এ মাদ্রাসায় সহকারী গ্রন্থাগারিক, নিরাপত্তা কর্মী ও আয়া নিয়োগ করা হয়। ওই নির্বাচনী বোর্ড ডিজির প্রতিনিধি হিসেবে দেখানো হয় ঢাকার সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়ার আরবি ও ইসলামী শিক্ষা বিভাগের প্রভাষক মো. রেজাউল করিম খন্দকারকে। অথচ মহাপরিচালক (ডিজির) মনোনীত প্রতিনিধি হিসেবে তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়নি এবং ডিজির প্রতিনিধি হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেননি।
চরফ্যাশন উপজেলার উত্তর চরমানিকা লতিফিয়া দাখিল মাদ্রাসায় জাল- জালিয়াতির মাধ্যমে মহাপরিচালকের প্রতিনিধি মনোনয়ন করে সহকারী গ্রন্থাগারিক/ক্যাটালগার, নিরাপত্তা কর্মী ও আয়া পদে অবৈধভাবে নিয়োগ এবং বেআইনিভাবে চলতি জুলাই মাসে তাদের এমপিওভুক্তির অনলাইন আবেদন সাবমিট করা হয়।
করোনার ছুটিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সময় ২০২০ সালের ২৭ আগস্ট ৫ সদস্যবিশিষ্ট নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ডে গ্রন্থাগারিক, নিরাপত্তা কর্মী ও আয়া নিয়োগ করা হয়। ওই নির্বাচনী বোর্ডে ডিজির প্রতিনিধি হিসেবে দেখানো হয় ঢাকার সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়ার ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপককে।
কিন্তু মহাপরিচালকের মনোনীত প্রতিনিধি ছিলেন মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরের পরিদর্শক সহযোগী অধ্যাপক শহীদ লতিফ। শুধু তাই নয়, ডিজির প্রতিনিধি যাকে দেখানো হয়েছে তাকেও নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ডে ডাকা হয়নি।
একই ধরনের অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া যায় অন্য মাদ্রাসা চারটিতেও। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার আমিনাবাদ হাকিমিয়া দাখিল মাদ্রাসায় ২০২০ সালের ৩০ আগস্ট একই জালিয়াতি করে সহকারী গ্রন্থাগারিক নিয়োগ দিয়ে চলতি জুলাই মাসে অনলাইনে এমপিওভুক্তির আবেদন সাবমিট করা হয়।
দক্ষিণ আছলামপুর মোবারক আলী দাখিল মাদ্রাসায় ২০২০ সালের ২৮ আগস্ট সহকারী গ্রন্থাগারিক নিয়োগ দিয়ে চলতি জুলাই মাসে অনলাইনে এমপিওভুক্তির আবেদন সাবমিট করা হয়।
চরফ্যাশন উপজেলার দক্ষিণ আছলামপুর মোবারক আলী দাখিল মাদ্রাসায় ২০২০ সালের ২৮ আগস্ট সহকারী গ্রন্থাগারিক নিয়োগ দিয়ে চলতি জুলাই মাসে অনলাইনে এমপিও আবেদন সাবমিট করা হয়।
আদেশ সূত্রে জানা গেছে, করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের মধ্যে জালিয়াতি করে নিয়োগ এবং অনলাইনে এমপিওভুক্তির আবেদন প্রতিষ্ঠানের পক্ষে প্রতিষ্ঠানপ্রধানরা সাবমিট করেন।
স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, শুধু এই ছয় প্রতিষ্ঠানই নয়, একইভাবে ভোলার চরফ্যাশনে প্রায় অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে।
জাল-জালিয়াতির অভিযোগ প্রসঙ্গে চরফ্যাশন উপজেলার আসলামিয়া হামেলা খাতুন বালিকা দাখিল মাদ্রাসার সুপার মো. মনিরুজ্জামান নিয়োগ বিষয়ে কিছু জানেন না দাবি করে বলেন, এ নিয়োগ গায়েবিভাবে হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্তপূর্বক দায়ীদের বিরুদ্ধ আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
দক্ষিণ ফ্যাশন সামসুল উলুম দাখিল মাদ্রাসার সুপার মো. মিজানুর রহমান কীভাবে নিয়োগ হয়েছে তিনি তা জানেন না দাবি করে বলেন, এ বিয়য়ে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
উত্তর চরমানিকা লতিফিয়া দাখিল মাদ্রাসার মো. ছালেহ উদ্দিন বলেন, জালিয়াতি চক্র মাদ্রাসার আইডি হ্যাক করে এটি করেছে। এ বিষয়ে থানায় জিডি করা হবে।
চরফ্যাশন মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মহিউদ্দিন জাতিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান ও সভাপতিকে জবাব দাখিল ও এমপিও স্থগিত হয়েছে বলে সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এ নিয়োগগুলো আমার যোগদানের আগে হয়েছে। এখানে আরও অনেক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ রয়েছে। অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো জবাব দাখিল করুক। জবাব সন্তোষজনক না হলে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।