পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলা ছাত্রদল সভাপতির বাহিনীর মধ্যযুগীয় নির্যাতনের শিকার এ সংখ্যালঘু পরিবারের সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূসহ তিনজন এখন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। সন্ত্রাসীরা বাড়ি ও মন্দির লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে সংখ্যালঘুদের। ভয়ে সংখ্যালঘুরা মামলা দায়ের করতে পারেনি। ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার ছাত্রদল নেতা সন্ত্রাসী টিপুর কাজে বাধা দেয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে ইছাছড়া গ্রামের সংখ্যালঘু ডা. অর্জুন দাসের বাড়িতে হামলা হয়েছে। এ সময় আহত হয়েছেন ৪ জন। অপরদিকে বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার গিমটাকাঠি ও আড়–য়ামর্দন গ্রামে মুখোশধারী সন্ত্রাসীরা দু’টি সংখ্যালঘু বাড়িসহ ৫টি বাড়িতে চড়াও হয়ে লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুটে নিয়েছে। বরিশাল থেকে স্টাফ রিপোর্টার ও মঠবাড়িয়া সংবাদদাতা জানান, কাবিখার আওতায় উপজেলার আমড়াগাছিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ সোনাখালী গ্রামের মিস্ত্রিবাড়ি থেকে হাজীবাড়ি পর্যন্ত গ্রামীণ সড়ক মেরামতের জন্য ছয় মেট্রিক টন গম বরাদ্দ করা হয়। এই প্রজেক্ট কমিটির চেয়ারম্যান উপজেলা ছাত্রদল সভাপতি নিজামুল কবির মিরাজ। এই গ্রামীণ সড়কের দু’পাশে কয়েকটি সংখ্যালঘু পরিবারের বসবাস। কাবিখার কাজ করানোর জন্য ছাত্রদল সভাপতির কর্মচারীরা সড়কের দু’পাশের সংখ্যালঘুদের জমি থেকে মাটি কেটে সড়ক সংসারের কাজ শুরু করে। শেষ জমিটুকু থেকে এভাবে মাটি কাটার প্রতিবাদ জানায় সংখ্যালঘু পরিবারগুলো। কিন্তু তাদের এই বাধা উপেক্ষা করে নিজামুল কবির মিরাজের শ্রমিকরা মাটি কাটতে থাকে। প্রান্তিক চাষীরা বাধ্য হয়ে ৭ এপ্রিল আদালতে মামলা দায়ের করে। আদালত মাটিকাটার ওপর অস্থায়ী ইনজাংশন জারি করে। কিন্তু আদালতের নোটিস তারা গ্রহণ না করে তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল। ১৩ এপ্রিল মিরাজ তার বাহিনী নিয়ে সেখানে যায়। সেখানে যাবার পর ব্যাপারিবাড়ির প্রান্তিক চাষীরা তাদের আদালতের ইনজাংশনের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে মাটি কাটতে বারণ করে। এ কথা বলার পরে তারা বাড়ি ফিরে আসার মুহূর্তে পিছন থেকে হামলা করে মিরাজের বাহিনী। তারা চায়নিজ কুড়াল, রামদা ও অন্যান্য ধারাল আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। ব্যাপক তাণ্ডব চালায় ব্যাপারিবাড়িতে। নির্বিচারে তারা সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা কমলা রানীকে (৪৫) মাটিতে ফেলে পিঠে ও নিতম্বে রামদার উল্টোদিক দিয়ে পেটায়। প্রবীর জমাদ্দার নামে একজনকে কুপিয়ে তার বাম কানসহ একটি অংশ কেটে ফেলে। বিধান ব্যাপারি ও ব্রজবালা নামে অপর একজন সত্তরোর্ধ বৃদ্ধাকে বেধড়ক পেটায়। সত্তরোর্ধ সাবেক ইউপি সদস্য সুজন মিত্রের হাত কুপিয়ে ও পিটিয়ে হাড় ভেঙ্গে কয়েক টুকরা করে ফেলে। কুপিয়ে বাড়ি ও হরি মন্দিরও ভাংচুর করে। সুজন মিত্র ও প্রবীর জমাদ্দারকে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তারা এখনও সংজ্ঞাহীন। বিএনপি ক্যাডারদের ভয়ে অন্তঃসত্ত্বা কমলা রানী স্থানীয় কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে চলে যায়। গত দু’দিন ধরে তার অবস্থার আরও অবনতি ঘটেছে। বন্ধ হয়ে গেছে পায়খানা প্রস্রাব। অপরদিকে নিজামুল কবির মিরাজ নিজের বাড়ি থেকে মালামাল সরিয়ে আহতদের বিরুদ্ধে মিত্থ্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিতে যাচ্ছে বলে আহতরা অভিযোগ করেছে। এ ঘটনার পরও আসামীরা কেউ গ্রেফতার হয়নি। ছাগলনাইয়া থেকে নিজসব সংবাদদাতা জানান, রবিবার ভোর রাতে অস্ত্র ব্যবসায়ী ও বহু মামলার পলাতক আসামী ছাত্রদল নেতা টিপু ছাগলনাইয়ার ইছাছড়া গ্রামের ডা. অর্জুনের বাড়ির সামনে একটি মাইক্রোবাসসহ চালককে অপহরণ করে নিয়ে হত্যার চেষ্টা করে। চালকের চিৎকারে ডা. অর্জুন ও তার বাড়ির লোকজন এগিয়ে আসে। তারা মাইক্রোবাস চালককে বাঁচানোর চেষ্টা করলে টিপু ক্ষিপ্ত হয়ে তার দলবলসহ ৭/৮ জন সংখ্যালঘু বাড়িটিতে হামলা করে ঘরবাড়ি ভাংচুর ও লুটপাট করে। এ সময় সন্ত্রাসীদের অস্ত্রের আঘাতে ডা. অর্জুন (৪২) ও তার পিতা কৃষ্ণদাস (৬২) গুরুতর আহত হয়। তাদের ছাগলনাইয়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। থানায় মামলা হয়েছে। বাগেরহাট থেকে নিজসব সংবাদদাতা জানান, কচুয়ার গিমটাকাঠি ও আয়ামর্দন গ্রামে মুখোশধারী সন্ত্রাসীরা ২টি সংখ্যালঘু বাড়িসহ ৫ বাড়িতে চড়াও হয়ে লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুটে নিয়েছে। শনিবার রাতে সন্ত্রাসীরা এ গ্রামের ক্ষিরোদ ও দেবেন্দ্র দেবনাথের বাড়িতে চড়াও হয়ে মালামাল লুটে নেয়।

দৈনিক জনকণ্ঠ, ১৬ এপ্রিল ২০০২

মন্তব্য করুন