চাঞ্চল্যকর জুলহাস মান্নান ও মাহবুব তনয় হত্যাকান্ডে সরাসরি অংশগ্রহণকারী আনসার আল ইসলাম এর সামরিক শাখার একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ডিএমপি’র কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগ।

গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির নাম- আসাদুল্লাহ (২৫)। যার সাংগঠনিক নাম ফখরুল ওরফে ফয়সাল ওরফে জাকির ওরফে সাদিক। ১৫ জানুয়ারি’১৯ তারিখ সন্ধ্যা ০৬.১৫টায় টঙ্গী এলাকা হতে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

আজ বেলা সাড়ে ১১টায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান ডিএমপি অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি) মোঃ মনিরুল ইসলাম বিপিএম (বার), পিপিএম(বার)।

গ্রেফতার সম্পর্কে সিটিটিসি প্রধান বলেন, মঙ্গলবার রাতে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে টঙ্গী এলাকায় অভিযান চালিয়ে ডিএমপি’র কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সদস্যরা জুলহাস-তনয় হত্যা মামলার অন্যতম মূলহোতা আসাদুল্লাহকে গ্রেপ্তার করে। এ হত্যাকান্ডে সরাসরি অংশ নিয়েছিল আসাদুল্লাহ।

২০১৬ সালে উত্তর বাড্ডার সাতারকুলে পুলিশের ওপর হামলা করে অস্ত্র ছিনিয়ে নিয়েছিল আসাদুল্লাহ। আনসার আল ইসলামে যোগদানের আগে সে যশোরের নওয়াপাড়া ইউনিয়ন ছাত্রশিবিরের কর্মী ছিল।

মামলা তদন্ত সম্পর্কে মনিরুল ইসলাম বলেন, ২০১৬ সালের ২৫ এপ্রিল রাজধানীর কলাবাগানে নিজ বাসায় খুন হন জুলহাস মান্নান ও তার বন্ধু তনয়। হত্যাকান্ডের দ্বায় স্বীকার করে আনসার আল ইসলাম। প্রথমে মামলাটি তদন্ত করে ডিএমপি’র গোয়েন্দা বিভাগ। পরবর্তী সময়ে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় কাউন্টার টেরোরিজম (সিটি) বিভাগ। তদন্তে এই হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন হতে থাকে। বিভিন্ন পর্যায়ে এই হত্যাকান্ডে ১৩ জন সম্পৃক্ত ছিল। তার মধ্যে আসাদুল্লাহ অন্যতম সদস্য।

তিনি আরো জানান, দীর্ঘ তদন্ত ও গ্রেফতারকৃতদের নিকট প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে আমরা নিশ্চিত হয়েছি হত্যাকান্ডের দিন ঘটনাস্থলে ছিল ৭ জন। যার মধ্যে ৫ জন ছিল কিলার গ্রুপ আর বাকী ২ জন ছিল ইন্টেলিজেন্ট গ্রুপের সদস্য। এখন পর্যন্ত এই হত্যাকান্ডের সাথে সরাসরি জড়িত ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার মধ্যে কিলার গ্রুপের মধ্যে ২জন হল আসাদুল্লাহ ও ইতোপূর্বে গ্রেফতারকৃত আরাফাত। আর বাকী ২ জন ইন্টেল গ্রুপের যাবের ওরফে জুবায়ের ও সায়মন।

প্রাথমিক জিজ্ঞসাবাদে গ্রেফতারকৃত জানায়, সে আনসার আল ইসলামের সামরিক শাখার দাওরা প্রশিক্ষক হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করত। সে বাড্ডা, আশকোনা, গাজীপুরের বিভিন্ন আস্তানায়/মারকাজে বাসা ভাড়া নেয়ার পদ্ধতি, নিরাপত্তার বিষয়, ডে-এ্যাম্বুশ, সম্মানজনক মৃত্যু, চাপাতি চালানো, পিস্তল চালানো, টার্গেট ব্যক্তিকে হত্যা করার এলাকায় রেকি করা এবং হত্যার সময় ও স্থান নির্ধারন করার পদ্ধতি সম্পর্কে সামরিক ট্রেনিং গ্রহন করে।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ২৫ এপ্রিল বিকালে পার্সেল দেয়ার কথা বলে কলাবাগানের লেক সার্কাস এলাকায় ৫/৭ যুবক জুলহাস মান্নানের বাসায় ঢুকে তাকে এবং তার বন্ধু তনয়কে কুপিয়ে হত্যা করে। ইউএসএআইডি কর্মকর্তা জুলহাস মান্নান সমকামীদের অধিকার নিয়েও কাজ করতেন। তিনি সমকামীদের নিয়ে সাময়িকী ‘রূপবান’ এর সম্পাদকও ছিলেন। আর মাহবুব রাব্বী তনয় ছিলেন লোকনাট্য দলের কর্মী। পিটিএ নামে একটি প্রতিষ্ঠানে ‘শিশু নাট্য প্রশিক্ষক’ হিসেবেও তিনি কাজ করতেন।

সূত্র: ডি এম পি নিউজ

মন্তব্য করুন