কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের কাটাখালী চাকমা পাড়া বৌদ্ধ বিহারে মুসলিম দুর্বৃত্তরা হামলা চালায় ও অগ্নিসংযোগ করে। এতে বিহারের রান্নাঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
রবিবার (২৪ অক্টোবর ২০২১) বিকাল ৪টার সময় এ হামলার ঘটনা ঘটে বলে জানা যায়।
হামলার সময় দুর্বৃত্তরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে ওই গ্রামের চাকমা সম্প্রদায়ের কয়েকজনকে কুপিয়ে আহত করে। এর মধ্যে তিন জন গুরুতর আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত রোববার বেলা তিনটার দিকে অরণ্য বৌদ্ধবিহার এলাকায় এক তরুণীকে উত্ত্যক্তের জেরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। হামলার নেতৃত্ব দেন হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ছাত্রলীগ সভাপতি তোফায়েল হোসেনসহ অন্তত ১৩ জন। হামলায় ১২ জন আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৯ জনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাঁরা সবাই চাকমাপল্লির বাসিন্দা।
সংঘর্ষের পর সন্ধ্যায় অরণ্য বৌদ্ধবিহারের পাশে একটি রান্নাঘরে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনায় ছাত্রলীগের নেতা তোফায়েল হোসেনকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে। আগুনে রান্নাঘরের কিছু অংশ পুড়ে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। চাকমাদের ভাষ্য, আগুন নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে বৌদ্ধবিহারটি পুড়ে ছাই হয়ে যেত। চাকমাপল্লিতে ৫০টি পরিবারের প্রায় ৩৫০ চাকমার বসবাস।
মামলার বাদী বলেন, মামলার পর তাঁর ওপর হুমকি-ধমকি আসছে। চাকমাপল্লির বাসিন্দারা হোয়াইক্যং বাজারে কেনাকাটায় যেতে সাহস পাচ্ছেন না। পল্লিতে তাঁদের রাত কাটছে আতঙ্কে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নিরাপত্তার আশ্বাস দেন উখিয়া-টেকনাফ (সার্কেল) সহকারী পুলিশ সুপার সাকিল আহমেদ ও টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পারভেজ চৌধুরী।
অভিযোগ প্রসঙ্গে ছাত্রলীগ সভাপতি তোফায়েল হোসেন বলেন, চাকমাদের সঙ্গে কথা-কাটাকাটি জেরে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। চাকমা তরুণীর সঙ্গে তাঁর কোনো কথা হয়নি। বিহারের রান্নাঘরে অগ্নিসংযোগের বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।
টেকনাফ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছে। সেখানকার কমিটিও বাতিল করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে তোফায়েল হোসেনের সভাপতি পদে থাকার সুযোগ নেই। তিনি এখন ছাত্রলীগের কেউ নন।
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম কক্সবাজার জেলা শাখার সহসভাপতি ক্য জ্য অং বলেন, ছাত্রলীগের হামলায় আহত আটজন কক্সবাজারের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁদের কারও মাথায়, কারও হাতে, কারও পায়ে, আবার কারও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার না করলে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবেন লোকজন।
ইউএনও পারভেজ চৌধুরী বলেন, তরুণীকে উত্ত্যক্ত করার জেরে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। কারা বিহারের রান্নাঘরে আগুন দিয়েছে, সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।