ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার বিদ্যাকুট গ্রামে এক সরকারি কর্মকর্তা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ইতালিপ্রবাসী স্বজনের জায়গাজমি দখলের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে ওই প্রবাসী ইতালিতে অবস্থিত বাংলাদেশি দূতাবাসে লিখিত আবেদন করেছেন।

 

ওই আবেদনের অনুলিপি প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছেও দেওয়া হয়েছে।

আবেদন করা প্রবাসীর নাম তাজুল ইসলাম। যে সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তিনি প্রতিকার চেয়ে আবেদন করেছেন, তাঁর নাম ছদর উদ্দিন ওরফে মানিক। তিনি ঢাকা কাস্টমস বিভাগের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা। তিনি সম্পর্কে প্রবাসী তাজুল ইসলামের ভাতিজা।

প্রবাসী তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, স্থানীয় দুই ব্যক্তিকে তিনি জমি ও পুকুর লিজ দিলেও তা দখলে রেখেছেন তাঁর দুই ভাই, সরকারি কর্মকর্তা ভাতিজা ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা। ফলে লিজ গ্রহীতারা জমি ও পুকুর দখলে নিতে পারছেন না।

ছদর উদ্দিন ও তাঁর মা-বাবাসহ চারজনের বিরুদ্ধে লিজের জমির লক্ষাধিক টাকার গাছ কেটে নেওয়া ও আরেক জমিতে দোকান দিয়ে দখলে রাখার অভিযোগ জানিয়ে দুই লিজ গ্রহীতা আদালতে পৃথক দুটি মামলা করেছেন।

প্রবাসীর অভিযোগ, সরকারি কর্মকর্তা ছদর উদ্দিন মানিকের প্রভাবে পুলিশ তাঁর জমি ও পুকুর দখলমুক্ত করার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

গত বছরের অক্টোবর মাসে দূতাবাসে করা প্রবাসীর আবেদন ও দুই লিজ গ্রহীতা সূত্রে জানা গেছে, প্রবাসী তাজুলের বড় ভাই আবু শামীমের ছেলে ছদর উদ্দিন মানিক ও তাঁর পরিবারের অন্যরা মিলে পৈতৃক ও ক্রয়সূত্রে তাজুলের পাওয়া বাড়িসংলগ্ন ১১ শতাংশ জমি ও ২৪ শতাংশের একটি পুকুরের জায়গা দখল করে নিয়েছেন।

প্রবাসী তাজুল ইসলাম জানান, প্রায় দুই যুগ ধরে তিনি প্রবাসে অবস্থান করছেন। তাঁর পরিবারের সদস্যরাও প্রবাসে রয়েছেন। ফলে বাড়িসংলগ্ন ১১ শতাংশ জায়গাসহ ২৪ শতাংশের একটি পুকুর মৃত তনজব আলীর ছেলে দুলাল মিয়ার কাছে বন্দোবস্ত দেন। বন্দোবস্ত দেওয়া এই জায়গাগুলো ছদর উদ্দিন মানিক ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা মিলে দখল করে নিয়েছেন। তাঁরা বন্দোবস্ত দেওয়া মালিককে গাছ ও পুকুরের মাছ ভোগ করতে দিচ্ছেন না।

বন্দোবস্ত গ্রহীতা দুলাল মিয়া জানান, পাঁচ বছরের জন্য পুকুর ও তিন বছরের জন্য বাড়িসংলগ্ন জায়গা বন্দোবস্ত (লিজ) নেন তিনি। এর মধ্যে পুকুরে চাষ করা মাছগুলো বিষ ঢেলে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছেন ছদর উদ্দিন ও তাঁর পরিবারের লোকজন। জমিতে লাগানো গাছগুলোও কেটে নিয়েছেন তাঁরা।
৩ এপ্রিল গামারি ও মেহগনিসহ প্রায় লক্ষাধিক টাকার গাছ কেটে নেন ছদর উদ্দিন ও তাঁর পরিবারের লোকজন। এ ঘটনায় স্থানীয়ভাবে কোনো বিচার না পেয়ে গত ২০ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ছদর উদ্দিনসহ চারজনের বিরেুদ্ধে মামলা করেন দুলাল মিয়া। তবে মামলার প্রায় এক মাস হতে চললেও ছদর উদ্দিন বা তাঁর পরিবারের কারও বিরুদ্ধে কোনো প্রতিকার পাননি।

দুলালের মতো প্রবাসী তাজুলের মালিকানাধীন ৪১ শতাংশ পরিমাণের আরেকটি জমি বন্দোবস্ত নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার গোকর্ণ গ্রামের হাজি গণি মিয়ার ছেলে আরস মিয়া। লিজের জায়গায় আরসের অনুমতি ছাড়াই দোকান দিয়েছেন তাজুলের আরেক বড় ভাই আবু তাহের।

বন্দোবস্ত গ্রহীতা আরস মিয়া বলেন, ‘আমার লিজ নেওয়া ৪১ শতাংশ জমির জায়গায় একটি স্কুল রয়েছে। স্কুল কমিটি আমাকে ভাড়াও দিচ্ছে। কিন্তু আমার অনুমতি ছাড়াই প্রবাসীর বড় ভাই আবু তাহের জোর করে স্কুলের পাশে দোকান বসিয়েছেন। দোকান সারিয়ে নিতে বললে আমাকে মারধর করা হয়। এ ঘটনায় আমি মামলাও করেছি।’ তাঁর অভিযোগ, সরকারি কর্মকর্তার প্রভাব বিস্তারের কারণে তাঁরা কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না।

অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ছদর উদ্দিনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি তাঁর বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট উল্লেখ করে ফোনের সংযোগ কেটে দেন। এরপর তাঁর ফোনে আবার যোগাযোগ করলে তিনি আর ফোন ধরেননি।

নবীনগর থানা–পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রভাষ চন্দ্র ধর বলেন, মামলার নথিপত্র দেখে ও তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এ মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে বলা যাবে।

প্রথম আলো

মন্তব্য করুন