জেলার সিংড়া থানা সদর থেকে ২৫ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে বসন্তপুর গ্রামে বুধবার রাতে ১৩টি সংখ্যালঘু বাড়িতে গণডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ডাকাতরা অস্ত্রের মুখে শিশু ও মহিলাদের জিম্মি করে নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার লুট করে দেড় কিলোমিটার দূরে কাওছারের ধান মাড়াইয়ের খোলায় ভাগাভাগি করে নিয়ে যায়। সেখানে ডাকাতিকাজে ব্যবহৃত লোহার শাবল, মহিলাদের হাতের চুড়ি ও অন্য কিছু জিনিসপত্র পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার সকালে সিংড়া থানায় ফোনে যোগাযোগ করে ডাকাতির ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে বলা হয়, কেউ এ সম্পর্কে অভিযোগ করেনি। তবে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেছে। ফিরে এলে কি ঘটেছে তা বলা যাবে। দুপুর পর্যন্ত একই কথা বলা হয় থানা থেকে। বিকেল ৪টায় ওই এলাকার সংসদ সদস্য প্রার্থী আ’লীগ নেতা শাজাহান, জেলা আ’লীগের সেক্রেটারী এডভোকেট হানিফ আলী শেখ, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের নেতা এডভোকেট সুশান্ত ঘোষ ও সুখময় রায় বিপ্লবসহ ঘটনাস্থলে ডা. রমেন্দ্র প্রামাণিকের বাড়িতে গেলে বাড়ির সামনে সিংড়া থানার এসআই ওবায়দুরকে কয়েকজন ফোর্সসহ দেখা যায়। তাদের সামনেই গ্রামবাসী জানায়, কিছুদিন আগে যারা নৌকায় ভোট দেয়ার অপরাধে চাঁদা নিল, ঘরে আগুন দিল, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে এ ঘটনা ঘটত না। অথচ তাদের সঙ্গেই পুলিশের প্রকাশ্যে মাখামাখি। ডাকাতরা রমেন্দ্র প্রামাণিক, নিতাই, অতুল, নীরেন, প্রভাত, দিনেশ, অজিত, কৃষ্ণ, বাসুদেব, জীতেন্দ্র, সুকুমার, দিলীপ ও চৈতন্যের বাড়িতে ডাকাতি করার সময় শিশু ও মহিলাদের মারপিট করে। রমেন্দ্রকে তারা বেদম প্রহার করে। তার স্ত্রী রেখা, কন্যা ভারতি সিংড়া কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছে। একই অবস্থা প্রভাত মাস্টারের মা সুমতীর। অজিতের স্ত্রী মায়া জানান, ডাকাতরা তাকে মারপিট করে। টাকা সোনা বের করে না দেয়ায় তার ১২ বছরের মেয়ে ইলা, ১০ বছরের মেয়ে জনিকে চাতাল থেকে ফেলে দেয়। জয়চাঁদের মেয়ে সীমাকে দোতলা থেকে নিচে ফেলে দেয়। মেয়েদের বুকে বন্দুক ধরে ইজ্জতহানির হুমকি দিয়ে মালামাল লুট করে। গ্রামবাসী জানায়, ৬০/৭০ জনের একদল সশস্ত্র ডাকাত গ্রামের প্রবেশমুখে পুকুর পাড়ে বোরো ধান মাড়াইরত লোকদের আটক করে গুলি করতে করতে একের পর এক বাড়িতে হানা দিয়ে লুট করে চলে যায়। গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলার সময় সিংড়া থানার এসআই আমজাদ ক্ষতিগ্রস্থদের বাড়িঘরে তদন্ত করছিলেন। তিনি ভাঙা সুটকেস ও অন্যান্য জিনিসপত্র ওভাবেই রাখার পরামর্শ দিলেন জব্দ করার জন্য। গণডাকাতির এ ঘটনার পর ওই দুই গ্রামের সংখ্যালঘুদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

সংবাদ, ১০ মে ২০০২

মন্তব্য করুন