বাক-প্রতিবন্ধী এক তরুণীকে (২৫) ধর্ষণের চেষ্টা করেন এক যুবক। এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর তরুণীর পরিবার ও অভিযুক্ত যুবকের পক্ষের লোকজনকে নিয়ে সালিশ করে গ্রামের মাতব্বরেরা। সালিশে মাতব্বরদের নেয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অভিযুক্তকে শাস্তি হিসেবে কান ধরে উঠবস ও ভৎর্সনা করে ছেড়ে দেয়া হয়। অথচ প্রচলিত আইনে ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনায় সর্বনিম্ন পাঁচ বছর কারাদণ্ড ও জরিমানা করার কথা। ঘটনাটি ঘটেছে নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার পাড়ইল ইউনিয়নে।
ভুক্তভোগী তরুণীর পরিবার ও কয়েক প্রতিবেশী জানায়, বুধবার (৪ আগস্ট) রাত সাড়ে ১১টার দিকে বাড়ির প্রাচীর টপকে তরুণীর ঘরে ঢুকে তার শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন খোকন মিয়া (৩৫) নামের এক যুবক। ঘটনাটি টের পেয়ে স্বজন ও প্রতিবেশীরা ছুটে এসে খোকনকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন এবং তাকে আটকে রাখেন। এরপর তরুণীর পরিবার গ্রামের মাতব্বরদের বিষয়টি জানান।
স্থানীয় সূত্র জানায়, তরুণীর পরিবার দরিদ্র হওয়ায় তাদের আইনের আশ্রয় নিতে নিরুৎসাহিত করেন মাতব্বররা। গ্রামের সালিশের মাধ্যমে সালিশের পরামর্শ দেন তারা। পরদিন সকালে স্থানীয় ইউপি সদস্য ইউসুফ আলীসহ অন্যান্যরা দুই পক্ষের কাছ থেকে ঘটনা শোনার পর তরুণীকে ধর্ষণ চেষ্টার অপরাধে অভিযুক্ত খোকন মিয়াকে ১০ বার কান ধরে উঠবস করায়। এরপর পরবর্তীতে এমন কাজ আর কখনো করবেন না বলে মুচলেকা দেন অভিযুক্ত খোকন।
ওই তরুণীর বাবা আরটিভি নিউজকে বলেন, আমার মেয়ের সম্মানহানি করতে খোকন ঘরে ঢুকেছিল। তাকে আমরা হাতেনাতে ধরে ফেলি। বিষয়টি রাতেই আমি মেম্বারসহ (ইউপি সদস্য) গ্রামের অন্যদের জানাই। মামলা করলে অনেক টাকা-পয়সা খরচ হবে বলে আমাকে থানায় মামলা না করার জন্য পরামর্শ দেন তারা। সালিশেই খোকনের কঠিন শাস্তি দেয়া হবে বলে তারা আশ্বাস দেন। কিন্তু মাতব্বররা খোকন মিয়াকে শুধু কান ধরে উঠবস করার শাস্তি দেয়। আমরা গরীব মানুষ। এনিয়ে থানা-কোর্ট করতে গেলে গ্রামের মাতব্বরেরা আমাদের গ্রামেই থাকতে দেবে না।
স্থানীয় ইউপি সদস্য ইউসুফ আলী আরটিভি নিউজকে বলেন, সালিশে আমি উপস্থিত ছিলাম। কিন্তু আমি কোনো সিদ্ধান্ত দেইনি। গ্রামের মুরব্বিরা সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। অভিযুক্ত খোকন তার ভুল স্বীকার করে পরবর্তীতে এমন ঘটনা করবেন না মর্মে মুচলেকা দেন সালিশে। এ ঘটনায় মাতব্বররা খোকনকে ১০ বার কান ধরে উঠবস করার রায় দেন।
নওগাঁ জেলা জজ আদালতের আইনজীবী মহসিন রেজা জানিয়েছেন, ধর্ষণ চেষ্টার শাস্তি সালিশ বৈঠক ডেকে দেয়ার বিধি নেই। কোনো নারী কিংবা শিশুকে ধর্ষণ অথবা ধর্ষণের চেষ্টা ফৌজদারি অপরাধ। ধর্ষণ কিংবা ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনা একমাত্র নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আমলে নিয়ে বিচার করতে পারবেন। অন্য কোনোভাবে বিচারের সুযোগ নেই। যারা সালিশ ডেকে শ্লীলতাহানির ঘটনার বিচার করেছেন তারা অন্যায় করেছেন। ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনায় শাস্তি হিসেবে আদালত দোষী সাব্যস্ত হওয়া যুবককে সর্বোচ্চ ১০ বছরের ও সর্বনিম্ন ৫ বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানা করতে পারেন।
নিয়ামতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর আরটিভি নিউজকে বলেন, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত থানায় কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। খোঁজ নিয়ে এ ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।