দুই ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় গোপালঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সাইন্স এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের চেয়ারম্যান সহকারী অধ্যাপক মো. আক্কাছ আলীকে চেয়ারম্যান পদ থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে। পাশাপাশি তাকে জানুয়ারি-জুন ২০১৯ থেকে জুলাই-ডিসেম্বর ২০২২ পর্যন্ত মোট ৮ সেমিস্টারের জন্য একাডেমিক ও প্রশাসনিক দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

১৮ এপ্রিল বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. নূর উদ্দিন আহমেদ স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। অফিস আদেশে বলা হয়েছে, সিএসই বিভাগের চেয়ারম্যান মো. আক্কাছ আলীর বিরুদ্ধে দুই ছাত্রীর যৌন নিপীড়নের অভিযোগের ভিত্তিতে গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃংখলা বোর্ড ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে এ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের শেষ বর্ষের দু’ ছাত্রী দেড় মাস আগে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ এনে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ ব্যাপারে মো. আক্কাছ আলীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। চলতি মাসের শুরুতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই দুই ছাত্রীর যৌন নিপীড়নের অভিযোগ প্রকাশ করা হয়। পরে সেটি ভাইরাল হলে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে জরুরি বৈঠক করে ওই শিক্ষককে চেয়ারম্যানের পদ থেকে বহিষ্কার করেন। পাশাপাশি তাকে সাময়িক ভাবে প্রশাসনিক ও একাডেমিক দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মো. আব্দুর রহিম খানকে সভাপতি ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক ড. মো. বশির উদ্দিনকে সদস্য সচিব করে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন, ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ঈশিকা রায় ও এসিসিই বিভাগের সভাপতি ড. মো. কামরুজ্জামান।

আন্দোলনের অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীরা ওই শিক্ষকের স্থায়ী চাকরিচ্যুতির দাবিতে সিএসই বিভাগের সামনে অবস্থান কর্মসূচী পালন, গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করেন। তদন্ত কমিটি বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা বোর্ডের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদন পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শৃঙ্খলা বোর্ড অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে এ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও শৃঙ্খলা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসির উদ্দিন জানান, তদন্ত প্রতিবেদন গোপনীয় একটি বিষয়। ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুই ছাত্রীর অভিযোগ সত্যতা পেয়েছে কি না এমন প্রশ্ন কৌশলে এড়িয়ে গিয়ে ভিসি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি ও পরিবেশ বিবেচনা করা হয়েছে। পাশাপাশি তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ওপর নির্ভর করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ সময়ে ওই শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পুরো বেতন ও সুযোগ সুবিধা ভোগ করবেন। কিন্তু তিনি একাডেমিক ও প্রশাসনিক কোন কাজ করতে পারবেন না।

ইত্তেফাক

মন্তব্য করুন