দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপি সমর্থক ও সন্ত্রাসীরা আওয়ামী লীগ সমর্থক ও সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট অব্যাহত রেখেছে। এসব ঘটনায় আহত হচ্ছেন অনেকেই। এ বিষয়ে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর : কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করা ও নৌকা প্রতীকে ভোট দেওয়ার কারণে জেলার বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বিএনপি ও শিবির কর্মীদের আক্রোশের শিকার হচ্ছেন। গত পাঁচ দিনে এ ধরনের আক্রোশের শিকার হয়ে অন্তত ৪০জন আহত হয়। গত ২ অক্টোবর উখিয়ার উত্তর ধুরংখালী মহাজন পাড়ায় এই আসনের বিজয়ী প্রার্থীর সমর্থকরা হামলা চালিয়ে স্থানীয় না ̧ বড়ুয়ার পুত্র টুনু বড়ুয়ার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে ও সংখ্যালঘুদের তিনটি বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে। কোটবাজার, বড়মহেশখালী ও কালারমারছড়ায় সন্ত্রাসীরা সেলুনে গিয়ে হুমকি দেয়, আজ থেকে চুল কাটা ৩ টাকা, সেভ করা ২ টাকা। এর বেশী নিলে ঘরবাড়ি জ্বালিয়েদেয়া হবে।তবে জেলার জাতীয় পার্টির (এরশাদ) সম্পাদক ও উখিয়া উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মাহমুদুল হক চৌধুরী গত ৪ অক্টোবর ’শান্তি সমাবেশ’ করে এলাকার উদ্ভুত পরিস্থিতি কাটিয়ে তোলার চেষ্টা করেন। মেহেরপুর প্রতিনিধি জানান, মেহেরপুরের মুজিবনগর থানার বলভপুর গ্রামে গতকাল রোববার সকালে বিএনপি কর্মীরা লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালিয়ে খোকন মলিক ও সোনা মলিকসহ ছয়টি খ্রিস্টান পরিবারের বসতবাড়ি ভাংচুর করে। এর আগে ছুগিন্দা ও আনন্দবাস গ্রামেও প্রায় ১৫টি খ্রিস্টান পরিবারের বাড়িতে বিএনপি কর্মীরা হামলা চালায় বলে গ্রামবাসী জানায়। এ ব্যাপারে মুজিবনগর থানায় জলিল, ইয়ারুল হক ও জুলফিকার হোসেনসহ ৩৬ জন বিএনপি কর্মীকে আসামী করে মামলা হয়েছে। পুলিশ বলছে, ঘটনাটি পূর্বশত্রুতার জের। এদিকে বিএনপির নেতারা এই ঘটনার জন্য আওয়ামী লীগের পরাজিত প্রার্থী সাবেক এমপি প্রফেসর আব্দুল মান্নানকে দায়ী করেন। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানান, গত কয়েকদিনে সন্ত্রাসীরা ঝিনাইদহ সদর থানার গোপালপুর বাজারে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের দোকানঘরে হামলা চালিয়ে বিপুল অঙ্কের টাকার মালামাল লুটপাট করছে। সন্ত্রাসীরা ঝিনাইদহের শৈলকুপা থানার প্রায় ৭০/৮০ টি বাড়িঘর ভাংচুর, লুট ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ১০টি বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। ফরিদগঞ্জ (চাঁদপুর) প্রতিনিধি জানান, গতকাল রোববার উপজেলার শ্রীকালিয়া গ্রামে নৌকায় ভোট দেওয়ার অভিযোগে সংখ্যালঘু বাসুদেব(১৮), নির্মল(২২) ও উৎপলকে পিটিয়ে আহত করা হয়। চাঁদপুর গ্রামে গফুরের বসতঘরে হামলা চালানো হয়। গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, বাগেরহাটে মোল্লাহাটে দফায় দফায় সন্ত্রাসীদের হামলায় জয়ঘা, চাঁদেরহাট, মাদারতলী, বুড়িগাঙনী, বড়গাওলা, চাগদাসহ বিভিন্ন গ্রাম এখন সংখ সংখ্যালঘু শূন্য হয়ে পড়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ভুক্তভোগী জানান,বড়গাওলা গ্রামে গত ৪ অক্টোবর রাতে সুনীতি মালাকার (৪৫) ও তার মেয়ে টুলুসহ (১৬) তিন মহিলাকে ২০/৩০ জনের একদল সন্ত্রাসী নির্যাতন করে। ঘটনার পর এলাকার সংখ্যালঘু বয়স্ক মহিলারাও গ্রাম ছাড়ছেন। এছাড়া প্রতি রাতে গ্রামের চিংড়ি ঘের গুলো থেকে সন্ত্রাসীরা মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। রাজবাড়ি প্রতিনিধি জানান, বিএনপির সমর্থকরা গত চার দিন ধরে জেলার পাংশা ও সদর উপজেলার চৌবাড়িয়া ও দত্তপাড়া গ্রামের তিনটি দুর্গামূর্তিসহ মন্দির ভাংচুর করে। এ ঘটনায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।
প্রথম আলো, ৮ অক্টোবর ২০০১