সারা দেশে ক্রমবর্ধমান দখল, হামলা এবং সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধ করতে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য পুলিশ এবং জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গতকাল সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে এই নির্দেশ দিয়ে বলা হয়, এখন থেকে কোথাও কোন বেআইনি কর্মকাণ্ড বিশেষ করে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটলে তার জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকার জেলা প্রশাসন এবং পুলিশকে তার দায়দায়িত্ব নিতে হবে। দায়িত্ব পালনে অনীহা দেখালে তাদের বিরুদ্ধেও শাস্তি মূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, বিভিন্ন স্থানে প্রতিষ্ঠান ও সম্পত্তি দখল, হামলা বিশেষ করে সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের ঘটনা পর্যালোচনা করতে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক ডাকা হয়। তবে পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনা করে প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি লতিফুর রহমান এবং উপদেষ্টা পরিষদের সব সদস্য সভায় অংশ নেয়। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে তিন বাহিনী, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশ ও বিডিআরের প্রধান এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবদেরও ডেকে পাঠানো হয়। বৈঠকে অংশগ্রহনকারী একাধিক সূত্র জানায়, সারা দেশে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং সংখ্যালঘুদের ওপর দমন-নির্যাতনরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থতার জন্য প্রধান উপদেষ্টা পুলিশের প্রতি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ সময় বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়, ক্ষমতার পালাবদলের আগ মূহুর্তে সারা দেশেই পুলিশসহ সরকারি প্রশাসন কার্যত নিস্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা কিংবা উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেয়েও প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে আগামী সরকারের শুভ দৃষ্টিতে থাকার চেষ্টাই বেশি হচ্ছে সূত্র জানায় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পুরোনো ক্ষোভ, প্রতিহিংসা থেকে কোথাও কোথাও হামলার ঘটনা ঘটেছে। তবে সংখ্যালঘু নির্যাতনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের হল, টার্মিনাল দখলের পেছনে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা থাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সেগুলোর ব্যাপারে নাক গলাচ্ছে না। বৈঠক সূত্রে জানায়, এ সময় প্রধান উপদেষ্টা পুলিশসহ অন্য সংস্থা গুলোর কাছ থেকে তাদের নিষ্ক্রীয়তার কারণ জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে যথাসম্ভব সচেষ্ট আছেন’ বলে জানান। তবে তারা বৈঠকে উল্লেখ করেন, দখলসহ সহিংসতার ঘটনা গুলোতে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা থাকায় পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেদ্বিধান্বিত। তারা দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতার কথা উল্লেখ করে বলেন, নির্বাচনে বিজয়ী দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে এই মুহূর্তে ব্যবস্থা নিলে সরকার গঠনের পর তাদের রোষানলে পড়তে হতে পারে। অতীতেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে বলেই পুলিশের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক আছে। জানা যায়, প্রধান উপদেষ্টা এ সময় বেগম খালেদা জিয়ার বিবৃতির উল্লেখ করে বলেন, নির্বাচনে বিজয়ী দলের প্রধান প্রকাশ্যে অপকর্মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহবান জানিয়েছেন। জবাবে পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়, এই মুহূর্তে ব্যবস্থা নিতে সমস্যা নেই সত্য কিন্তুু দুদিন পরই তার ফল ভোগ করতে হবে। সূত্র মতে,প্রধান উপদেষ্টা সংশ্লিষ্ট সবাইকে ‘এখনো নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আছে’⎯এ কথা মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, অবৈধ দখল, উচ্ছেদসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। তত্বাবধায়ক সরকারের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত এই সরকারের নির্দেশনা মতো কাজ পরিচালনার জন্য নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, দায়িত্ব পালনে অনীহা দেখালে কিংবা শৈথিল্য দেখালে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তি মূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রথম আলো, ৮ অক্টোবর ২০০১

মন্তব্য করুন