দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা-ভাংচুরের ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। পাঁচবিবি ও ময়মনসিংহে দুস্কৃতকারিরা ১৪টি মূর্তি ভাংচুর করেছে। ফেনীর তুলাতলা ও ছেউরিয়ায় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, ভাঙচুর ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিভিন্ন দলের নেতারা। নেতারা দোষীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি করেছেন। সগ্জজ গত রোববার রাত ২টায় ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা সদরের ধামদী রাধা গোবিন্দ মন্দিরে কতিপয় দুস্কৃতকারি হামলা চালিয়ে শ্রী শ্রী রাধা কৃষ্ণ যুগল মূর্তি সহ ৯টি মূর্তি ভাঙচুর করেছে। এগুলোর মধ্যে তিনটি মূর্তির মস্তক হামলাকারিরা নিয়ে গেছে। এ ব্যাপারে মন্দির কমিটির সভাপতি মিহির চন্দ্র বিশ্ব শর্মা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন। ঘটনার পর পুলিশ সুপার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এই ঘটনায় স্থানীয় পূজা উদ্যাপন কমিটির সভাপতি প্রবোধ রঞ্জন সরকার, সাধারণ সম্পাদক চন্দন রঞ্জন সরকার হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতি বিনষ্ট করার লক্ষ্যে একটি কুচক্রী মহল উক্ত ঘটনা ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন। সেনবাগ থেকে খোরশেদ আলম জানান, নির্বচনের পর দেশব্যাপী সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন, নিপীড়নের প্রতিবাদে গতকাল বুধবার সকালে নোয়াখালী জেলা শহরে মানববন্ধন পালিত হয়েছে। সকাল সাড়ে ১০টার সময় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে শতাধিক ছাত্র/যুবক মুখে কালো কাপড় বেঁধে মানববন্ধন করে সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধের দাবি জানান এবং সাম্প্রতিক ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের যুব সংগঠন নোয়াখালী জেলা শাখার উদ্যেগে এ কর্মসূচি পালিত হয়। এরপর দুপুর সাড়ে ১১টার সময় অনুরূপভাবে নোয়াখালী প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে দীর্ঘ ১ ঘন্টা মানববন্ধন করে। ফেনী প্রতিনিধি জানান, ফেনী জেলার সদর থানার তুলাতলা ও ছেউড়িয়ায় ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার প্রতিবাদে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ ফেনী জেলা শাখার উদ্যেগে স্থানীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে মঙ্গলবার এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ শেষে এক বিক্ষোভ মিছিল শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন নিখিল দাস ও সুমন ভৌমিক । সমাবেশে বক্তারা বলেন, গত ১ অক্টোবর অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনোত্তর সারাদেশে ধর্মীয় ও জাতীয় সংখ্যালঘুদের ওপর কায়েমী স্বার্থবাদী মহল ও সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী অব্যাহত হামলা চালিয়ে আসছে। অবিলম্বে হামলা বন্ধ করতে হবে । বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীর গতকাল বুধবার এক বিবৃতিতে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা সম্পর্কে দু’মন্ত্রীর বক্তৃতার প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছেন, নির্বাচনোত্তর সময়ে সারাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর পরিচালিত নির্যাতনের যেসব খবরাখবর পত্রপত্রিকাসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে তাকে গত ১৬ অক্টোবর ২০০১ স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী আব্দুল মান্নন ভূঁইয়া এবং ̄স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী অতিরঞ্জিত ও ভিত্তিহীন অপপ্রচার বলে মন্তব্য করেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এ ধরনের চরম দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্যে বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ বিষ্মিত ও ক্ষুদ্ধ। বিবৃতিতে তিনি আরো বলেন, অবিলম্বে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা বন্ধ এবং তাদের নিরাপত্তা দিতে হবে। পাঁচবিবি (জয়পুরাহাট) প্রতিনিধি জানান, পাঁচবিবি উপজেলার ধরাঞ্জি ইউনিয়নের সালুয়া গ্রামে সালুয়া বারোয়ারী পূজা মন্দিরে গত সোমবার মধ্যরাতে সন্ত্রাসীরা ৫টি মূর্তি ভাঙচুর করেছে। সালুয়া পূজা কমিটির সভাপতি কৈলাশ চন্দ্র জানান, ওই দিন মধ্যরাতে কে বা কারা মন্দিরে নির্মীয়মান অসূর ও দুর্গা প্রতিমার হাত ভাঙচুর করে। মূর্তি ভাঙচুরের ফলে এলাকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সহ জন সাধারণের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনাস্থল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান, সহকারী কমিশনার, থানা পুলিশ কর্মকর্তা পরিদর্শন করেন। হামলার প্রতিবাদে গতকাল বুধবার পাঁচবিবি ছাত্র যুব ঐক্য পরিষদ আয়োজিত উপজেলা বারোয়ারী মন্দির প্রাঙ্গণে বিকাল ৫টায় সারাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর অব্যাহত নগ্ন হামলা, সন্ত্রাস, হত্যা অবিলম্বে বন্ধ করার লক্ষে এক আলোচনা সভা ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।

প্রথম আলো, ১৮ অক্টোবর ২০০১

মন্তব্য করুন