বান্দরবানের চিম্বুকের ম্রো জনগোষ্ঠীকে তাদের ভূমি থেকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ নাকরে তাদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নিকট একটি খোলা চিঠি পাঠিয়েছে এশিয়া ইন্ডিজেনাস পিপল্স প্যাক্ট (AIPP), থাইল্যান্ড ও ইন্টারন্যাশনাল ওয়ার্কগ্রুপ ফর ইন্ডিজেনাস অ্যাফেয়ার্স (IWGIA), ডেনমার্ক নামে দু’টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন।
এছাড়া উক্ত খোলা চিঠিটির বক্তব্য ও দাবিগুলোর প্রতি বিশ্বের ৮২টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন এবং ১০৬ জন খ্যাতনামা ব্যক্তিত্ব, জাতিসংঘের এক্সপার্ট, মানবাধিকারকর্মী, অধ্যাপক, পরিবেশবাদী, আইনবিদ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সমর্থন রয়েছে। উক্ত খোলাপত্রটি গত ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ইমেইল ও পোস্টের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন- এশিয়া ইন্ডিজেনাস পিপল্স প্যাক্ট (AIPP) ও ইন্টারন্যাশনাল ওয়ার্কগ্রুপ ফর ইন্ডিজেনাস অ্যাফেয়ার্স (IWGIA) যৌথভাবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বরাবর পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে বান্দরবানের ম্রো জনগোষ্ঠীকে উচ্ছেদ না করে তাদের সুরক্ষার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে আহ্বানও করা হয়েছে।
উক্ত চিঠিতে আরো বলা হয়, বান্দরবানে পাঁচতারা হোটেল নির্মাণ প্রক্রিয়া গ্রহণ করার ফলে সেখানকার আদিবাসী ম্রো জনগোষ্ঠী জোরপূর্বক উচ্ছেদের শিকার হচ্ছে। সরকার, মিলিটারি ও কোম্পানীর চাপে স্থানীয় আদিবাসীরা সেখানে অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই করে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিকসংগঠনগুলো সংহতি প্রকাশের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারকে এ ব্যাপারে তলব করতে বলা হয়েছে। গত ৬ ডিসেম্বর ২০২০, এশিয়া ইন্ডিজেনাস পিপল্স প্যাক্ট (AIPP) এর মহাসচিব গ্যাম এ শিমরায় এর স্বাক্ষরিত একটি প্রেসবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ বিষয়টি জানানো হয়।
এআইপিপি প্রতিনিধি সোহেল হাজং স্বাক্ষরিত উক্ত খোলা চিঠিতে বাংলাদেশ সরকারের নিকট ৬ দফা দাবি তোলে ধরা হয়। দাবিগুলো হলো-
(১) অবিলম্বে চিম্বুক-থানচি রাস্তায় বিলাসবহুল হোটেল নির্মাণ প্রক্রিয়া বন্ধ করুন। ম্রো এবং অন্যান্য আদিবাসীদের জমিতে পরবর্তীতে কোনও নির্মাণ বা স্থাপনার পদক্ষেপ গ্রহণের পূর্বে তাদের সাথে যথাযথ সম্মান রেখে তাদের স্বাধীন ও পূর্বাহিতকরণ সম্মতি গ্রহণ করা।
(২) সংবিধান এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনে বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি অনুসারে আদিবাসীদের জীবন ও জীবিকা রক্ষা এবং বিকাশে ব্যবস্থা নেওয়া।
(৩) এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ আন্দোলন করার জন্য স্থানীয় ম্রো আদিবাসী নেতাকর্মীদের হয়রানি ও ভয় দেখানো অবিলম্বে বন্ধ করা।
(৪) আদিবাসীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে অবৈধ ও লজ্জাজনক হস্তক্ষেপের বিষয়ে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন করে বিষয়টির তদন্ত পরিচালনা করা।
(৫) আদিবাসী ম্রো সম্প্রদায় এবং তাদের প্রতিনিধি সংগঠনগুলির উদ্বেগ সম্পর্কিত বিষয়ে তাদের সাথে একটি গঠনমূলক সংলাপ স্থাপন করা।
(৬) পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি (১৯৯৭) দ্রুত, যথাযথ এবং সম্পূর্ণ বাস্তবায়নের জন্য একটি সময়সীমা বা রোডম্যাপ ঘোষণা করা।