রংপুরের পীরগঞ্জে প্রাণিসম্পদ বিভাগ কর্তৃক ‘সমতল ভূমিতে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানোন্নয়নের লক্ষ্যে সমন্বিত প্রাণীসম্পদ প্রকল্প’ বাস্তবায়নের শুরুতেই সুফলভোগী পরিবার নির্বাচন ও প্যাকেজভিত্তিক অনুদান বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম ও ঘুষ বাণিজ্যের অভিযাগ পাওয়া গেছে। প্রত্যেক সুফলভোগীকে অনুদান পেতে গুণতে হয়েছে ছয় থেকে ১০ হাজার টাকা। যেসব অসহায় সুফলভোগী টাকা দিতে ব্যর্থ হয়েছে তাদেরকে তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

 

ভূক্তভোগীরা জানায়, প্রাণিসম্পদ বিভাগ সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান কিংবা ইউপি সদস্যকে না জানিয়ে সুফলভোগী পরিবার নির্বাচনে আদিবাসী নেতা চৈত্রকোল ইউনিয়নের খালিশা (আদিবাসী পল্লী) গ্রামের জোহান মিনজির ছেলে আগষ্টিন মিনজিকে দায়িত্ব প্রদান করেন। চতুর ওই আদিবাসী নেতা সরকারি সকল নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে অসহায় ও হতদরিদ্রদের বাদ দিয়ে নিজ নামসহ তার ছোট ভাই ও নিকটাত্মীয়দের তালিকাভূক্ত করেন। সংশ্লিষ্ট বিভাগ কোন প্রকার তদারকি বা যাচাই-বাছাই না করে সেই তালিকা অনুমোদন করে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সমতল অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ভাগ্যন্নোয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও আমিষের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে ৩৫২ কোটি তিন লাখ টাকা ব্যয়ে (দেশের তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান অঞ্চলকে বাদ দিয়ে) ২৯ জেলার ২১০টি উপজেলায় এক লাখ ৩৮ হাজার ৬৩৫ পরিবার বিচ্ছিন্নভাবে ছড়িয়ে থাকা অনগ্রসর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী এই প্রকল্পের সুবিধা পাবে। এরই অংশ হিসেবে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার আটটি ইউনিয়নের ৭৫ পিছিয়ে পড়া ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পরিবার এই প্রকল্পের সুফলভোগ করবেন। ইউনিয়নগুলো হলো চৈত্রকোল, বড়দরগা, মদনখালী, টুকুরিয়া, বড় আলমপুর, শানেরহাট, পাঁচগাছী ও চতরা। প্রকল্পের আওতায় প্রত্যেক সুফলভোগী পরিবারের জন্য রয়েছে একটি ক্রসব্রীড বকনা গরু, ১২৫ কেজি গো-খাদ্য, চারটি টিন, চারটি আরসিসি পিলার, ১৯০টি ইট ও একটি সাইনবোর্ড।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চৈত্রকোল ইউনিয়নের আদিবাসী পল্লী ছিলিমপুর ও খালিশা গ্রামে কোথাও কোন সাইনবোর্ড নেই। গরু আছে, গো-খাদ্য দেওয়া হয়নি। কোথাও দেওয়া হয়েছে বরাদ্দকৃত ইটের অর্ধেক। ফলে এখনও কোথাও গরুর সেড নির্মাণ করা হয়নি। এছাড়া আদিবাসী ওই নেতার নিকটাত্মীয় না হওয়ায় এবং ধায্যকৃত টাকা দিতে না পারায় খালিশা গ্রামের নির্মল খালকো, মাইকেল খালকো, ফাতেমা রাণী হাসদা, সোমরা কেরকাটা ও বিরসা কেরকাটাসহ অনেকে তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন।

সুফলভোগী ছিলিমপুর গ্রামের ফারান্সিস কুজুর, স্বপন টপ্য, সিলিউস টপ্য, পাছকাল টপ্য, খালিশা গ্রামের রবিন মিনজি, বেনেদী কুজুর, শ্যামল কুজুর, সুবল কুজুর ও পাসকাল মিনজি বলেন, আদিবাসী নেতা আগষ্টিন মিনজি উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করার কথা বলে প্রত্যেকের কাছ থেকে ছয় থেকে ১০ হাজার করে টাকা নিয়েছে। আমরা ধার-দেনাসহ সংসারের মূল্যবান জিনিসপত্র বিক্রি করে সরকারের সমতল অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য প্যাকেজভিত্তিক এই অনুদান পেতে টাকা দিয়েছি।

অভিযুক্ত আদিবাসী নেতা আগষ্টিন মিনজি প্রথমে কথা বলতে না চাইলেও পরে সুফলভোগীদের কাছে টাকা গ্রহণের কথা স্বীকার করেছেন।

এ ব্যাপারে পীরগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম বলেন, অফিসে লোকবল সংকটের কারণে সঠিক তদারকি হয়নি। আদিবাসী নেতা কর্তৃক সুবিধাভোগীদের কাছে টাকা লেন-দেনের বিষয়টি শুনেছি। অফিসের নাম করে টাকা নেওয়া হয়েছে। কেউ অভিযোগ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কালের কণ্ঠ

মন্তব্য করুন