রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলায় গৃহবধূ আসমা বেগমকে (৪৫) ধর্ষণের পর কুপিয়ে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন বলে দাবি করেছেন মোহনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাক আহম্মেদ।
হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদঘাটনের জন্য গ্রেপ্তার দুজনকে ২৪ জুন সোমবার আদালতে হাজির করে পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়েছে পুলিশ। আদালত তাদের জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।
গ্রেপ্তার হওয়া দুজন হলেন মোহনপুরের কেশরহাট পৌরসভার রায়ঘাটি গ্রামের শামছুদ্দিন (৫০) ও হরিদাগাছি গ্রামের নুরুল ইসলাম (৫১)।
ওসি মোস্তাক আহম্মেদ জানান, গ্রেপ্তারকৃতদের দেওয়া তথ্য অনুসারে ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
২২ জুন শনিবার গৃহবধূ আসমা বেগমের লাশ উদ্ধারের পর ছেলে মাসুদ রানা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে থানায় হত্যা মামলা করেন। ঘটনার পর থেকে রাজশাহী জেলা পুলিশের সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন দেবের নেতৃত্বে জেলা ডিবি পুলিশ ও মোহনপুর থানা পুলিশ হত্যার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারের জন্য চিরুনি অভিযান চালায়। রোববার রাতে মোহনপুর থানার পুলিশ কেশরহাটে অভিযান চালিয়ে শামছুদ্দিন ও নুরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে।
এলাকাবাসী জানায়, মোহনপুরের ফুলশো গ্রামের চান মোহাম্মদের সঙ্গে প্রায় ২৬ বছর আগে একই উপজেলার উষায়ের হাটরা গ্রামের মৃত ফয়েজ উদ্দিনের মেয়ে আসমা বেগমের (৪৫) বিয়ে হয়। দুই সন্তান জন্মের পর স্বামী চান মোহাম্মদ আসমা বেগমকে তালাক দেন। ওই সময় থেকে আসমা বেগম ছেলেমেয়েকে নিয়ে উষায়ের হাটরা গ্রামে বাবার বাড়িতে থাকতেন। পরে আসমা বেগম পাশের তীলাহারি গ্রামের হাসেম আলীর ছেলে বাবুল ইসলামকে দ্বিতীয় বিয়ে করলেও তিনি হাটরা গ্রামে বাবার বাড়িতেই থাকতেন। তবে স্বামী বাবুল হোসেন সপ্তাহে দুদিন হাটরা গ্রামে আসমার বাড়িতে যেতেন।
এদিকে মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার পর থেকে আসমা বেগম তাঁর একমাত্র ছেলে মাসুদ রানাকে (২২) নিয়ে হাটরা গ্রামেই বসবাস করতেন।
মাসুদ রানা জানান, ২১ জুন শুক্রবার রাজমিস্ত্রির কাজ শেষে সন্ধ্যা ৭টায় বাড়িতে ফিরে মায়ের কাছ থেকে খাবার খেয়ে হাটরা গেডির মোড়ে যান তিনি। রাত ৯টার সময় বাড়ি ফিরে মাকে দেখতে না পেয়ে তিনি ঘুমিয়ে পড়েন। শনিবার সকাল ৮টার দিকে হাটরা গ্রামের আন্না ও রাঙ্গা নামে দুই শিশু উষায়ের হাটরা গ্রামের ডাঙ্গা বিলে ছাগল চড়াতে গিয়ে আসমা বেগমের লাশ দেখতে পান। তারা গ্রামে ফিরে বিলে লাশ পড়ে আছে বলে চিৎকার করতে থাকে।
স্থানীয়রা বিলে গিয়ে আসমা বেগমের বিবস্ত্র লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয়। তারা লাশের কাছে পড়ে থাকা কাপড় দিয়ে নিহতের শরীর ঢেকে দেয়।
মোহনপুর থানার ওসি মোস্তাক আহম্মেদ জানান, আসমা বেগমের লাশ উদ্ধারের সময় ঘটনাস্থল থেকে একটি ভাঙ্গা মোবাইল ফোন ও একটি খালি টাইগারের বোতল উদ্ধার করা হয়েছে। গৃহবধূর মুখমণ্ডল ও মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, শুক্রবার রাতের কোনো এক সময় ধর্ষণের পর ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে।