রাজশাহীতে সংখ্যালঘু এবং আদিবাসীদের ওপর হামলা ও হুমকি প্রদর্শন বন্ধ হয়নি। জেলার গোদাগাড়ী, তানোর, পুঠিয়া এবং দুর্গাপুর উপজেলায় এই হামলা ও হুমকিদান অব্যাহত রয়েছে। বিভিন্ন স্থানে মন্দির, প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনা ঘটছে। এসব হামলা, হুমকি ও ভাংচুরের ঘটনার জন্য আওয়ামী লীগ বিএনপিকে দায়ী করেছে। গত মঙ্গলবার বিভিন্ন এলাকায় সরজমিনে ঘুরে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা প্রত্যক্ষ করা গেছে। অব্যাহত হামলা-হুমকিপ্রদর্শনের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট এলাকা গুলোতে আতঙ্কাবস্থা বেড়েই চলছে। ক্ষতিগ্রস্থরা পুলিশ প্রশাসনের রহস্যময় নীরবতায় শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। কোন কোন এলাকার সংখ্যালঘুরা তাদের আসন্ন সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন বলেও খবর পাওয়া গেছে। দুর্গাপুরের যুগীশো গ্রামের কালীপদ জানান, গত ৭ অক্টোবর বিএনপি সমর্থকরা তার উপর হামলা চালায়। তারা একই এলাকার নীরেন, বীরেন, জগদীশ, ধীরেনসহ ৫০ টি পরিবারকে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি দিচ্ছে। ফলে ১০/১২ টি পরিবার ভয় ও আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। তানোরের আদিবাসী গ্রাম মাসিন্দায় দেড়শ ভোটার রয়েছে। এখানকার বাসিন্দা আব্দুস সামাদ ও আদিবাসী রমেশ জানালেন, ভোটের দিন সেখানে বিএনপি সমর্থকরা হামলা করে। এখানে আদিবাসীদের শতাধিক ভোট জাল করা হয়েছে। মাত্র ৩০ ভাগ আদিবাসী তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতেপেরেছেন বলে তারা জানান। আদিবাসীদেরকে ভয়-ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। সংখ্যালঘু ব্যবসায়ী সুনীল বলেন, আমরা চরম আতঙ্কে আছি। আমাদেরকে ভয়-ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন করা হচ্ছে সর্বদা। ব্যবসায়ী স্বপন কুমার দাস নির্বাচনের পর দিন থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তানোরের হিন্দুপাড়া ও গোল্লাপাড়াতে দেড় সহস্রাধিক সংখ্যালঘু আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। এখানে কয়েকদিন আগে আসন্ন দুর্গাপূজা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সংখ্যালঘুরা। পরে আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্দ্যেগে তা বাতিল করে পূজা অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ; কিন্তু তারপরও সংখ্যালঘুদের ভয় কাটেনি। সবার মধ্যে এক অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে। এদিকে নির্বাচনের পরের দিন গোদাগাড়ী উপজেলার আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রাম গোপাল পুরে হামলা চালান হয়। সেখানকার আদিবাসীরাও চরম আতঙ্কে আছেন। রাজশাহী-১ আসনে আওয়ামী লীগের পরাজিত প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, নির্বাচনে হার জিত থাকবেই; কিন্তু তার মানে এই নয় যে, জয়ী হওয়ার পর প্রতিপক্ষের ওপর হামলা চালাতে হবে। তিনি সংখ্যালঘু, আদিবাসী এবং আওয়ামী লীগ সমর্থকদের ওপর হামলা-হুমকি ও নির্যাতন বন্ধের দাবী জানিয়েছেন। তানোর-গোদাগাড়ীর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কিছু আদিবাসী ও সংখ্যালঘু অভিযোগ করে জানান, বিএনপি সমর্থকরা এ বলে হুমকি দিচ্ছে যে এই আসনে বিএনপি বিজয়ী প্রার্থী ব্যারিষ্টার আমিনুল হক মন্ত্রী হচ্ছেন। এরপর সবাই কে ‘সাইজ’ করা হবে। অন্যদিকে দুর্গাপুর ও পুঠিয়া উপজেলাতেও সংখ্যালঘুদের ওপর জুলুম-নির্যাতন চলছে বলে খবর পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার রাতে পুঠিয়ার সাতবাড়িয়াতে শিলমাড়িয়া কালী মন্দিরে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর করা হয়েছে।

দৈনিক সংবাদ, ১১ অক্টোবর ২০০১

মন্তব্য করুন