ইউরোপীয় কমিশন বাংলাদেশের নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা বিশেষ করে সংখ্যালঘুদের হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ, সহায়সম্পত্তি লুট ও দখলের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এসব ঘটনা সম্পর্কে বিভিন্ন ব্যক্তি ও কয়েকটি এনজিওর সাক্ষী প্রমাণসহ দেয়া তথ্য এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্ট ছাড়াও ইউরোপীয় কমিশন নিজস্ব উদ্যেগে রিপোর্ট সংগ্রহ করেছে। সংখ্যালঘুদের ওপর এ ধরনের অত্যাচার ও নির্যাতন ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ইউরোপীয় কমিশনের রাষ্ট্রদূত এনটোনিও ডি সুজা নতুন সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। সংখ্যালঘুদের ওপর কোন ধরনের নির্যাতন বা প্রতিশোধমূলক আক্রমণ থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরত রাখার জন্য তিনি বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতাদেরও অনুরোধ করেছেন। ইউরোপীয় কমিশন সংখ্যালঘুদের ওপর বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের ঘটনাবলী গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দীর্ঘ মেয়াদী নির্বাচন পর্যবেক্ষক টিম প্রায় এক মাসেরও বেশি সময় ধরে ১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনের দিন পর্যন্ত নির্বাচন পর্যবেক্ষণ রিপোর্ট গত ১১ অক্টোবর প্রধান নির্বাচন কমিশনের কাছে জমা দিয়েছে। এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রাথমিক রিপোর্ট। নির্বাচনের আগে আইনশৃঙ্খলা পরিি ̄’তি, ভোটের দিন সঠিক সময়ে ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে কিনা, ভোট গ্রহনের আগে পোলিং এজেন্টদের সামনে ভালভাবে ব্যালট বাক্স দেখানো হয়েছে কিনা, নির্বাচনের দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন কিনা, কাউকে জোরপূর্র্বক ভোট দানে বাধা দেয়া হয়েছে কিনা, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের পোলিং এজেন্ট ঠিকমতো উপস্থিত ছিল কিনা, নির্বাচনের দিন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেমন ছিল এবং ভোট গণনা সঠিকভাবে হয়েছে কিনা-এসব বিষয় প্রাথমিক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। এসব বিষয়ে হাঁ-না প্রশ্নের আকারে পর্যবেক্ষক দল ৩০টি জেলার পাঁচ শ’ ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনকালে ভোটারদের উত্তরের ভিত্তিতে এই প্রাথমিক রিপোর্ট তৈরি করেছে। প্রাথমিক রিপোর্টে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল সিইসির কাছে প্রাথমিক রিপোর্ট জমা দিতে গিয়ে নির্বাচন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে আলাপকালে সংখ্যালঘুদের ওপর বিভিন্ন ধরনের আক্রমণ ও নির্যাতন ছাড়াও নির্বাচনের আগে প্রশাসনে ব্যাপক রদবদল নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে বলে উল্লেখ করে। তবে বিষয়টি তাদের প্রাথমিক নির্বাচন পর্যবেক্ষণ রিপোর্টের অংশ নয় বলে তারা এটাকে কমিশনের বক্তব্য না বলে পর্যবেক্ষক দলের অভিমত হিসাবে উল্লেখ করে। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাচন পর্যবেক্ষক টিমের চুড়ান্ত রিপোর্টে নির্বাচনপরবর্তী ঘটনাবলীর তথ্য থাকবে। চুড়ান্ত রিপোর্টের কাজ শেষ হওয়ার পথে। চুড়ান্ত রিপোর্টটি তারা নির্বাচন কমিশনে জমা দেবে। সংখ্যালঘুদের হত্যা ও বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন প্রসঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এম,এ সাঈদের বক্তবয় নিয়ে বিভিন্ন মহলে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। সিইসি বলেছেন, সংখ্যালঘুদের হত্যা-নির্যাতন করা হচ্ছে বলে ঢালাওভাবে যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা সর্বাংশে সঠিক নয়। তবে এধরনের যে কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। নতুন সরকার দৃঢ় পদক্ষেপ নিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। তার এ বক্তব্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। এদিকে বাংলাদেশ পুজা উদযাপন পরিষদ সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ সত্ত্বেও তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান ও কয়েকজন উপদেষ্টা এবং সিইসি যথাযথ ব্যবস্থা না নিয়ে বরং স্বাভাবিক ঘটনা হিসাবে বর্ণনা করে বক্তব্য দেয়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের সকল সামাজিক, সাংস্কতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে তাদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে।

দৈনিক জনকন্ঠ, ১৪ অক্টোবর ২০০১

মন্তব্য করুন